জীবনী সাহিত্য
কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীকে কেন্দ্র করে স্তুতিমূলক যে সাহিত্য রচিত হয়, তাই জীবনী সাহিত্য। মধ্যযুগে চৈতন্যদেবের জীবনী অবলম্বনে রচিত কাব্যগুলো বাংলা ভাষায় জীবনী সাহিত্য রচনার প্রথম প্রয়াস। চৈতন্যদেবের মৃত্যুর পর তাঁর ভক্তরা চৈতন্যদেবের জীবনী নিয়ে সাহিত্য রচনা করা শুরু করেন। চৈতন্যদেবের জীবনচরিত পদ হিসেবে প্রথম সংস্কৃত ভাষায় রচিত হয়। চৈতন্যের প্রথম জীবনীগ্রন্থ 'মুরারি গুপ্তের কড়চা', যা মুরারিগুপ্ত রচনা করেন। এ কাব্যের প্রকৃত নাম 'শ্রী শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্যচরিতামৃত'।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
প্র. শ্রীচৈতন্যদেবের শ্রেষ্ঠ জীবনীকার কে?
উ. কৃষ্ণদাস কবিরাজ। তাঁর রচিত বাংলা ভাষায় সর্বাপেক্ষা তথ্যবহুল শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থ 'চৈতন্যচরিতামৃত' (১৬১৫)।
প্র. শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থগুলো কী কী?
গ্রন্থের নাম | রচয়িতার নাম |
চৈতন্য-ভাগবত' | বৃন্দাবন দাস |
চৈতন্যমঙ্গল' | লোচন দাস |
চৈতন্যচরিতামৃত' (১৬১৫) | কৃষ্ণদাস কবিরাজ |
শ্রী শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্যচরিতামৃত' | মুরারিগুপ্ত |
অন্যান্য জীবনী গ্রন্থ-
রচয়িতার নাম | গ্রন্থের নাম |
সৈয়দ সুলতান | নবী বংশ', 'শব-ই-মিরাজ', 'রসুল বিজয়' |
ঈশান নাগর | অদ্বৈতপ্রকাশ' |
হরিচরণ দাস | অদ্বৈতমঙ্গল' |
প্র. জীবনী সাহিত্য বলতে কি বুঝায়? (৩০তম বিসিএস লিখিত)
উ. বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মধ্যযুগে গতানুগতিক ধারায় জীবনী সাহিত্য এক বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। কোনো বিখ্যাত ব্যক্তির জীবনীকে কেন্দ্র করে স্তুতিমূলক যে সাহিত্য রচিত হয়, তাই জীবনী সাহিত্য। শ্রীচৈতন্যদেব ও তাঁর কতিপয় শিষ্যের জীবনকাহিনী অবলম্বনে এই জীবনী সাহিত্যর সৃষ্টি। চৈতন্য জীবনের কাহিনীতে কবিরা অলৌকিকতা আরোপ করেছেন। বৃন্দাবন দাস রচিত বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনীগ্রন্থ 'চৈতন্য-ভাগবত'।
অদ্বৈত আচার্য ছিলেন বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রধান ব্যক্তি। অদ্বৈত আচার্য ও তার স্ত্রীকে নিয়ে হরকৃষ্ণ দাস সংস্কৃত ভাষায় রচনা করেন 'বাল্যলীলাসূত্র' (১৪৮৭)। তাকে নিয়ে প্রথম বাংলায় 'অদ্বৈতপ্রকাশ' নামে জীবনী রচনা করেন ঈশান নাগর।
প্র. বাংলা সাহিত্যে শ্রীচৈতন্যদেবের ভূমিকা কী? (৩৫ বিসিএস লিখিত)
উ. শ্রীচৈতন্যদেব বাংলা সাহিত্যে এক অমর প্রভাবক। বাংলা সাহিত্যে একটি অক্ষর না লিখেও সাহিত্যের এক বিশাল অংশ জুড়ে তাঁর অবস্থান। তিনি এদেশে বৈষ্ণব ধর্মের ব্যাপক সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিপর্যন্ত হিন্দু সমাজে যে নবচেতনার সঞ্চার করেছিলেন তাঁর অসীম প্রভাব ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে তৎকালীন সমাজ ও সাহিত্যে সম্প্রসারিত হয়ে তাঁকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। সামন্তযুগের অনুদার মতাদর্শকে অস্বীকার করেই তিনি প্রচার করলেন জীবে দয়া, ঈশ্বরের ভক্তি এবং সকলের অধিকার। তাঁর প্রচারিত বৈষ্ণব ধর্ম বাংলা কবিতায় বৈষ্ণব দর্শনের প্রবেশ ঘটায়। এর মাধ্যমে বাংলা কাব্য দেব-দেবীর স্তুতিমূলক ধারা থেকে বেরিয়ে এসে মানবধর্মের প্রশস্তিতে মেতে উঠে। তাঁর অনুসারীরা একের পর এক রচনা করেন কালজয়ী জীবনী সাহিত্য। বৃন্দাবন দাস রচনা করলেন 'চৈতন্য-ভাগবত'। এটি বাংলায় শ্রীচৈতন্যদেবের প্রথম জীবনীগ্রন্থ। কৃষ্ণদাস কবিরাজ রচনা করলেন 'চৈতন্যচরিতামৃত'। শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকাহিনী অবলম্বনে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে জীবনী সাহিত্যের সূচনা হয়।
প্র. বাংলা সাহিত্যে একটি পক্তি না লিখেও কার নামে একটি যুগের সৃষ্টি হয়েছে?
উ. শ্রীচৈতন্যদেব (১৪৮৬-১৫৩৩) ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী এবং ষোড়শ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ধর্ম ও সমাজ সংস্কারক। পিতৃপ্রদত্ত নাম- বিশ্বম্ভর মিশ্র। ডাক নাম- নিমাই। চৈতন্য প্রবর্তিত ধর্ম হলো 'মানবপ্রেম ধর্ম'। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, 'মুচি হয়ে শুচি হয় যদি কৃষ্ণ ভজে।'
এ. শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনী গ্রন্থকে কি বলা হয়?
উ. কড়চা। এর অর্থ ডায়রি বা দিনলিপি।
প্র. বাংলা সাহিত্যে কোন সময়কে চৈতন্য যুগ বলা হয়?
উ. ১৫০০-১৭০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সময়কে।