অনুবাদ সাহিত্য
মধ্যযুগের কবিরা পয়ার ছন্দে অনুবাদ সাহিত্য ভাবানুবাদ করতেন। পুরাণ কাহিনীগুলো মূলত অনুবাদ করতেন হিন্দু কবিরা আর মুসলমান কবিরা ফারসি, হিন্দি, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা থেকে অনুবাদ করেছেন। কবিরা মূল কাহিনী ঠিক রেখে মাঝে মাঝে নিজেদের মনের কথা অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
প্র. মহাভারত কে রচনা করেন?
উ. মহাভারত রচিত হয় প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে, যা সংস্কৃত ভাষায় রচিত। ১৮ খণ্ডে ও ৮৫০০০টি শ্লোকে বেদব্যাস 'সংস্কৃত' ভাষায় এটি রচনা করেন। পাণ্ডব বংশের পাঁচ ভাইয়ের সঙ্গে কুরু বংশের ১০০ ভাইয়ের যুদ্ধের কাহিনী নিয়ে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ বেদব্যাস রচনা করেন মহাভারত। বেদ বাক্য ব্যাখ্যা করার কারণে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ণ এর নাম হয় 'বেদব্যাস'। বেদব্যাস হিমালয়ের এক পবিত্র গুহায় তপস্যা করার পর মহাভারতের সম্পূর্ণ ঘটনাটি স্মরণ করেন এবং গণেশ তা লিপিবদ্ধ করেন।
প্র. মহাভারত প্রথম বাংলায় কে অনুবাদ করেন?
উ. ষোল শতকের কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর। তিনি সুলতান হোসেন শাহের সেনাপতি চট্টগ্রামের পরাগল খানের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি অনুবাদ করেন বলে এর নামকরণ করেন 'পরাগলী মহাভারত'।
প্র. মহাভারতের শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে?
উ. সতের শতকের কবি দেব বংশের কাশীরাম দাস। তার অনূদিত বিখ্যাত পঙ্ক্তি-
'মহাভারতের কথা অমৃত সমান,
কাশীরাম দাস ভনে শোনে পুণ্যবান।'
প্র. 'ছুটিখানী মহাভারত' কে রচনা করেন?
উ. পরাগল খার পুত্র ছুটি খানের (প্রকৃত নাম- নসরত খান) নির্দেশে শ্রীকর নন্দী এটি রচনা করেন। তিনি শুধু অশ্বমেধপর্ব অনুবাদ করেন।
প্র. রামায়ণ কে রচনা করেন?
উ. সংস্কৃত ভাষার প্রাচীন মহাকাব্য রামায়ণ। এটি রচনা করেন বাল্মীকি। তাঁর মূল নাম- দস্যু রত্নাকর। এটি ২৪ হাজার শ্লোকে রচিত এবং ৭টি কাণ্ডে বিভক্ত (আদিকাণ্ড, অযোধ্যাকাণ্ড, অরণ্যকাণ্ড, কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড, সুন্দরকাণ্ড, লঙ্কাকাণ্ড ও উত্তরকাণ্ড)। শ্লোকগুলো ৩২ অক্ষরযুক্ত 'অনুষ্টুপ' ছন্দে রচিত। এ কাব্যের উপজীব্য হল বিষ্ণুর অবতার রামের জীবনকাহিনী। 'বল্মীক' শব্দের অর্থ উইপোকা। দস্যু রত্নাকর উইপোকার ঢিবির উপর বসে রাম নামের তপস্যা করতেন বলে তার নাম হয় বাল্মীকি।
প্র. রামায়ণের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ অনুবাদক কে? (১৫তম বিসিএস লিখিত।
উ. কৃত্তিবাস ওঝা। কৃত্তিবাসের রামায়ণের অন্য নাম 'শ্রীরাম পাঁচালী'।
প্র. রামায়ণের প্রথম মহিলা অনুবাদক কে? (১৩তম বিসিএস লিখিত)
উ. চন্দ্রাবতী। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি।
প্র. 'ভাগবত' বাংলায় কে অনুবাদ করেন?
উ. এটি 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়' (১৪৮০) নামে বাংলায় অনুবাদ করেন মালাধর বসু। এ অনুবাদের জন্য রুকনুদ্দিন বরবক শাহ তাকে 'গুণরাজ খান' উপাধি প্রদান করেন। [অষ্টাদশ শতকের কবি শিবানন্দ করের উপাধিও ছিল 'গুণরাজ খান'।
প্র. 'ভাগবত' সম্পর্কে কী জান?
উ. 'ভাগবত' একটি ভক্তিবাদী ধর্মগ্রন্থ, যা হিন্দুদের মহাপুরাণ হিসেবে পরিচিত। বিষ্ণুর পূর্ণ অবতার কৃষ্ণের প্রতি গভীর ভক্তিই এ পুরাণের আলোচ্য বিষয়। হিন্দু পৌরাণিক সাহিত্যের অনেক কাহিনীর মধ্যে বিষ্ণুর ২৪ জন অবতারের কাহিনী ভাগবত পুরাণে লিপিবদ্ধ আছে। এটি ১২ খণ্ড ও ৬২০০০ শ্লোকে লিপিবদ্ধ। এর রচনাকাল নবম-দশম শতাব্দী। এটিই প্রথম হিন্দু পুরাণ, যা ইউরোপীয় ভাষায় অনূদিত হয়েছে।