হিন্দু কলেজ ও ইয়ংবেঙ্গল
বাংলা সাহিত্যের বিকাশে যেসব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় এবং ডেভিড হেয়ারের সহায়তায় ২০ জানুয়ারি, ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার 'হিন্দু কলেজ' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কলকাতার মধ্যবিত্ত সমাজের সন্তানেরা আধুনিক শিক্ষা গ্রহণের যথার্থ সুযোগ লাভ করে। এ কলেজের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা প্রবর্তন করা। ১৫ এপ্রিল, ১৮৫৫ সালে হিন্দু কলেজের পরিসমাপ্তি ঘটে এবং এর স্থলাভিষিক্ত হয় প্রেসিডেন্সি কলেজ। ১৫ জুন, ১৮৫৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজের যাত্রা শুরু হয়। হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও ছিলেন হিন্দু কলেজের তরুণ শিক্ষক এবং 'ইয়ংবেঙ্গল' আন্দোলনের প্রবক্তা।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর
প্র. হিন্দু কলেজ কবে প্রতিষ্ঠিত হয়?
উ. ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দ।
প্র. ইয়ংবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা/মন্ত্রগুরু কে?
উ. হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও। তিনি মাত্র ১৭ বছর বয়সে ১৮২৬ সালে এ কলেজে যোগ দেন। ২৩ এপ্রিল, ১৮৩১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ ডিরোজিওকে পদত্যাগ করতে পত্র দেন এবং ২৫ এপ্রিল, ১৮৩১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন। ডিরোজিও ২৬ ডিসেম্বর, ১৮৩১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্র. ইয়ংবেঙ্গল কারা?
উ. ইয়ংবেঙ্গল আত্মপ্রকাশ করে ১৮৩১ সালে। যুক্তি ও মানবাধিকারের দীপ্ত বাণীর শপথে ইংরেজি ভাবধারাপুষ্ট বাঙালি যুবক। 'আস্তিকতা হোক, নাস্তিকতা হোক, কোন জিনিসকে পূর্ব থেকে গ্রহণ না করা; জিজ্ঞাসা ও বিচার'- এ মন্ত্রে যারা উজ্জীবিত ছিল তারাই ইয়ংবেঙ্গল। ডিরোজিওর আদর্শে অনুপ্রাণিত ইয়ংবেঙ্গল ছাত্রগোষ্ঠী সর্বগ্রাসী ক্ষুধায় ইউরোপীয় ভাবচিন্তাকে আত্মস্থ করেছিলেন। ছাত্র হিসেবে সকলেই ছিলেন প্রতিভাবান, ইংরেজি শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহী এবং ধর্মীয় গোড়ামীর ব্যাপারে অত্যন্ত সমালোচনামুখর। বিবিধ সংবাদপত্র পরিচালনা, পুস্তিকা রচনা, শিক্ষা বিস্তার, বিতর্ক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে তারা ছিলেন তৎপর।
প্র. কারা ইয়ংবেঙ্গলের সদস্য ছিলেন?
উ. কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, রামগোপাল ঘোষ, রামতনু লাহিড়ী, প্যারীচাঁদ মিত্র, তারাচাঁদ চক্রবর্তী প্রমুখ। এরা সবাই ছিলেন মুক্তচিন্তা দ্বারা উজ্জীবিত। হিন্দু সমাজে বিদ্যমান সামাজিক ও ধর্মীয় কাঠামো এদেরকে বিদ্রোহী করে তুলেছিল। প্রাচীন ও ক্ষয়িষ্ণু প্রথা তথা ধর্মীয় সংস্কার ও সামাজিক শৃঙ্খলমুক্তির উল্লেখযোগ্য প্রয়াস হিসেবে ইয়ংবেঙ্গলের সদস্যগণ গো-মাংস ভক্ষণ ও মদ্যপানে আনন্দবোধ করতেন। মাইকেল মধুসূদন দত্ত হিন্দু কলেজের ছাত্র থাকাবস্থায় ডিরোজিওর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। সমাজের প্রচলিত কুসংস্কারকে পদানত করে মাইকেল মধুসূদন দত্ত ইউরোপীয় চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সমাজের ধর্মান্ধতা ও গোড়ামী দূর করার জন্য কলম ধরেন। পরবর্তীতে ইয়ংবেঙ্গল গোষ্ঠীর সদস্যরা ডিরোজিওর আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে তিনি নব্য ইয়ংবেঙ্গলদের অনাচার ও উচ্ছৃঙ্খলতাকে কটাক্ষ করে ১৮৫৯ সালে রচনা করেন বিখ্যাত প্রহসন 'একেই কি বলে সভ্যতা'।
প্র. ইয়ংবেঙ্গলের মুখপত্র/ পত্রিকা কী কী?
উ. 'এন্কোয়ার' (সম্পাদক- কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়),
'জ্ঞানান্বেষণ' (সম্পাদক- দক্ষিণারঞ্জন মজুমদার)।