প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলো প্রকৃতির বিভিন্ন শক্তি ও প্রক্রিয়ার কারণে সৃষ্ট বিপর্যয়, যা মানুষের জীবন, সম্পদ এবং পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। প্রধান প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ভূমিকম্প, যা ভূত্বকের প্লেটগুলো চলাচলের ফলে সৃষ্টি হয়; ঘূর্ণিঝড়, যা উষ্ণ সমুদ্রের বাষ্পীভবনের কারণে তৈরি হয় এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়; বন্যা, অতিবৃষ্টি বা নদীর পানি উপচে পড়ার কারণে ঘটে; খরা, যা দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টিপাতের অভাবের ফলে সৃষ্টি হয়; এবং অগ্ন্যুৎপাত, যা আগ্নেয়গিরি থেকে লাভা ও গ্যাস নির্গমনের মাধ্যমে ঘটে। এছাড়া ভূমিধস, সুনামি, টর্নেডো এবং তুষারধসও গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব দুর্যোগের ফলে মানুষ এবং প্রাণীকুলের জীবনহানি ঘটে, ফসল নষ্ট হয়, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্যোগ পূর্বাভাস, এবং দুর্যোগ-পরবর্তী সঠিক ব্যবস্থাপনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব কমাতে সহায়ক।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ চক্র (Disaster Management Cycle) হলো একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগে, সময় এবং পরে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করে। এটি চারটি মূল ধাপে বিভক্তঃ
প্রতিরোধ ও প্রশমন (Mitigation): এই পর্যায়ে দুর্যোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, ঘূর্ণিঝড় প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণ, ভূমিকম্প-প্রতিরোধী অবকাঠামো তৈরি, বনাঞ্চল সংরক্ষণ, এবং বন্যার ঝুঁকিপ্রবণ এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়ন।
প্রস্তুতি (Preparedness): দুর্যোগের আগে জরুরি অবস্থার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি, দুর্যোগকালীন পরিকল্পনা তৈরি, উদ্ধারকারী দল প্রশিক্ষণ, পূর্বাভাস ব্যবস্থা স্থাপন এবং জরুরি সরঞ্জাম ও খাদ্য মজুদ রাখা।
প্রতিক্রিয়া (Response): দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের জীবন রক্ষা, আহতদের চিকিৎসা, খাদ্য ও পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং আশ্রয় প্রদান।
পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধার (Recovery): দুর্যোগের পর দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ, ক্ষতিপূরণ প্রদান, এবং পুনর্বাসন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে।