মেসোপটেমীয় সভ্যতা (The Mesopotamian Civilization)
বিশ্বের প্রাচীনতম সভ্যতা মেসোপটেমীয়। আনুমানি খ্রিষ্টপূর্ব ৫০০০ অব্দে ইরাকে টাইগ্রিস (অন্য নাম দজলা) ও ইউফ্রেটিস (অন্য নাম (ফায়াত) নদীর উর্বর তীরঞ্চলে মেটোপটেমীয় সভ্যতার বিকাশ ঘটে। এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকলে ও একই ভূ-খন্ডে গড়ে উঠায় একত্রিতভাবে এ সভ্যতাসমূহকে বলা হয় মেসোপটেমীয় সভাতা। ‘মেসোপটেমিয়া’ একটি গ্রিক শব্দ। এ অর্থ দুই নদীর মধ্যবর্তী ভূমি । আধুনিক তুরস্ক,সিরিয়া , ইরান , ইরাক ও কুয়েত রাষ্ট্রগুলো প্রাচীন এই সভ্যতার অংশ ছিল।তবে বেশির ভাগ বর্তমানে ইরাকে অবস্থিত। মেসোপটেমীয়া সভ্যতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবিলনীয় সভ্যতা, আসেরীয় সভ্যতা ও ক্যালডীয় সভ্যতা।
ক) সুমেরীয় সভ্যতা:
মেসোপটেমীয়াতে সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতা গড়ে তুলেছিল সুমেরীয়গণ। সুমেরীয়দের অদিবাসি ছিলএলামের পাহাড়ি অঞ্চলে। খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে এদের একটি শাখা মেসোপটেমীয়ার দক্ষিণে বসতি গড়ে তোলে। সুমেরীয়দের আয়ের মূল উৎস ছিল কুষি। তারা উন্নত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। সুমেরীয়গণ ‘কিউনিফর্ম (Cuneiform) নামে একটি নতুন লিপির উদ্ভাবন করে। কিউনিফর্মকে বলা হয় অক্ষরভিত্তিক বর্ণলিপি (letter based alphabet)। সুমেরীয়দের বর্ণমালার কোনো কোনোটি দেখতে ইংরেজি বর্ণমালার V এর মতো । কিউনিফর্ম হলো পাঠোদ্ধারকৃত পৃথিবীর সর্বপ্রাচীন লিপি কিউনিফর্ম লিপিতে লেখা হয় বিখ্যাত মহাকাব্য ‘গিলগামেশ’ (Gilgamesh) । জল ঘড়ি ও চন্দ্রপঞ্জিকা (Lunar Calender) আবিষ্কার সুমেরীয়দের গুরুত্বপূর্ন অবদান। সুমেরীয়দের ্সবচেয়ে বড় অবদান চাকা (Wheel) আবিষ্কার । আইনের ক্ষেত্রে সুমেরীয় শাসক উর- নামু এর অবদান গুরুত্বপূর্ন । তিনি সর্বপ্রথম পৃথিবীর ইতিহাসে লিখিত আইনের প্রবর্তন করেন যা ’Code of Ur - Nammu ' নামে পরিচিত।
খ) ব্যাবিলনীয় সভ্যতা
সিরিয়ায় মরুভূমি অঞ্চলের আর্মোরাইট জাতি আনুমানিক ২০৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে মেসোপটেমীয়া অঞ্চলে একটি নগরসভ্যতা গড়ে তোলে। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার স্থপতি ছিলেন বিখ্যাত আমোরাইট নেতা হাম্মুরাবি । হাম্মুরাবি লিখিত আইন প্রণয়ন করেন - যা হাম্মুরাবি কোড (Code Of Hammurabi) নামে পরিচিত। পৃথিবীর প্রাচীনতম মানচিত্র পাওয়া যাছ ব্যাবিলনের উত্তদের গাথুর শহরের ধ্বংসাবশেষে ।
গ) অ্যাসেরীয় সভ্যতাঃ
ব্যাবিলন থেকে প্রায় দুইশত মাইল উত্তরে টাইগ্রিস নদীর তীরে ‘আশুর’ নামে একটি সমৃদ্ধ শহর গড়ে উঠে। ইতিহাসে আসিরীয়ার পরিচয় সামরিক রাষ্ট্র হিসাবে । তারাই প্রথমে লোহার অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী গঠন করে এবং যুদ্ধরথের ব্যবহার করে। আসিরীয়রা প্রথম বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রি তে ভাগ করে। পৃথিবীকে সর্বপ্রথম তারা অক্ষাংশ (Latitude) ও দ্রাঘিমাংশে (Longitude) ভাগ করেছিল।
ঘ) ক্যালডীয় সভ্যতাঃ
ব্যাবিলন শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠায় ক্যালডীয় সভ্যতা ইতিহাসে ‘নতুন ব্যাবিলনীয় সভ্যতা নামেও পরিচিত। ক্যালডীয় সভ্যতার স্থপতি ছিলেন সম্রাট নেবুচাদনেজার। তিনি সম্রাজ্ঞীর সন্তুষ্টি বিধানের জন্য নগর দেওয়ালের উপরে এক মনোরম উদ্যান নির্মাণ করেন। ইতিহাসে যা 'ব্যাবিলনের শূন্যউদ্যান’ (The Hanging Gardens of Babylon) নামে পরিচিত। এটি প্রাচীন পৃথিবীর সন্তাশ্চর্যের একটি। ক্যালডীয়রাই প্রথম সপ্তারকে ৭ দিনে বিভক্ত করে আবার প্রতিদিনকে ১২ জোড়া ঘন্টায় ভাগ করায় পদ্ধতি তারা বের করে। ক্যালডীয়রা ১২ টি নক্ষত্রপুঞ্জের সন্ধান পান। তা থেকে ১২ টি রাশিচক্রের (12 Zodiac Circles) সৃষ্টি হয় ।