রোমান সাম্রাজ্য

রোমান সাম্রাজ্য (The Roman Empire) 

খ্রিষ্টপূর্ব ৭৫৩ সালে ইতালির টাইবার নদীর তীরে রোম নগরী স্থাপিত হয়। এই নগরীর গোড়াপত্তন করেন রোমাস ও রমুলাস নামে দুই ভাই। প্রথম দিকে ছিল এটা একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। গ্রিক সভ্যতার পতন ঘটলে এই রোমকে কেন্দ্র করে বিশাল রোমান সাম্রাজ্য গড়ে ওঠে। রোমান সম্রাজ্য সমগ্র ইউরোপ, উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল ব্যাপী বিস্তৃত ছিল। এই বিশাল সাম্রাজ্য শাসনের জন্য রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী বাইজান্টিয়াম নামক স্থানে দ্বিতীয় রাজধানী প্রতিষ্ঠা করেন। ৩৩০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই দ্বিতীয় রাজধানীর নামকরণ করা হয় কনস্টান্টিনোপল। এই নামকরণ করা হয়েছিল সম্রাট কনস্টানটাইনের নামানুসারে। শাসনের সুবিধার জন্য ৩৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রোমান সাম্রাজ্য ২ ভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা-

ক) পশ্চিমাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্য: রাজধানী রোমকে কেন্দ্র করে পশ্চিমাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্য শাসিত হতো। ৪৭৬ খ্রিষ্টাব্দে বর্বর জার্মান জাতি সমূহের হাতে পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতন ঘটে কিন্তু পূর্ব রোমান সাম্রাজ্য অক্ষত থেকে যায়। 

খ) পূর্বাঞ্চলীয় রোমান সাম্রাজ্যঃরাজধানী কনস্টান্টিনোপলকে কেন্দ্র করে পূর্ব ইউরোপ, পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, কৃ ষ্ণসাগরীয় অঞ্চল, এশিয়া মাইনরসহ পশ্চিম এশিয়া অঞ্চল শাসিত হতো। এই অঞ্চল 'বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য' নামে অভিহিত হয়। ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি মুসলমানদের হাতে কনস্ট্যান্টিনোপল পতনের ভেতর দিয়ে বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের পতন ঘটে। কনস্ট্যান্টিনোপল ইস্তাম্বুল নাম নিয়ে আজ অবধি তুরস্কের অধিকারে আছে। 

রোমের সবচেয়ে খ্যাতিমান সম্রাট ছিলেন জুলিয়াস সিজার। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার বছর আগে ৪৬ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে তিনি রোমের সম্রাট হন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি 'এলাম, দেখলাম, জয় করলাম',। কিন্তু রোমে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও ষড়যন্ত্র প্রবল হতে থাকলে ব্রুটাস ও ক্যাসিয়াস নামের দুই অভিজাতের হাতে জুলিয়াস সিজার নিহত হন। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। অবশেষে তিন নেতা একযোগে ক্ষমতায় আসেন। এরা হলেন অক্টেভিয়াস সিজার, মার্ক এন্টনি এবং লেপিডাস। এ তিনজনের একত্র শাসনকে ইতিহাসে 'ত্রয়ী শাসন' বলা হয়। ত্রয়ী শাসন বেশিদিন টেকেনি। অক্টেভিয়াস সিজার প্রথমে পরাজিত করেন লেপিডাসকে। এন্টনি মিশরের রাজকন্যা ক্লিওপেট্রা-কে বিয়ে করে শক্তি সঞ্চয় করেছিলেন। ক্লিওপেট্রা ইতিহাসে 'নীল নদের সর্প' (Serpent of the Nile) নামে পরিচিত। কিন্তু তিনিও পরাজিত হন অক্টেভিয়াস সিজারের হাতে। এভাবে অক্টেভিয়াস সিজার রোমান সম্রাজ্যের একচ্ছত্র লা অধিপতি হয়ে 'অগাস্টাস সিজার' উপাধি গ্রহণ করেন। অগাস্টাস বর্ণ সিজারের শাসনামলে খ্রিষ্টধর্মের প্রবর্তক যীশুখ্রিষ্ট্রের জন্ম হয়।

সাহিত্য: হোরাস ও ভার্জিল এ যুগের বিখ্যাত কবি। ভার্জিলের বিখ্যাত মহাকাব্য 'ইনিড'। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ট্যাসিটাস এ যুগে রোমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।

স্থাপত্য: রোমান সম্রাট হার্ডিয়ানের তৈরি গোলাকার ধর্মমন্দির 'প্যানথিয়ন' (Pantheon) এর বৃষ্টিরোধক কংক্রিটের গম্বুজ আজও টিকে আছে। রোমে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাট্যশালা 'কলোসিয়াম' তৈরি হয়েছিল।

আইন: বাইজান্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ান সর্বপ্রথম সম্পূর্ণ রোমান আইন সংকলন করেন। আইনের ক্ষেত্রে আধুনিক বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে রোমান আইনের উপর নির্ভরশীল।

পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য (Holy Roman Empire)

পশ্চিম রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর জার্মান জাতির একটি শাখা প্রবলভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরা ইতিহাসে ফ্রাঙ্ক নামে পরিচিত ছিল। এই ফ্রাঙ্ক জাতি অষ্টম শতকের মধ্যেই জামান ও ফ্রান্সের বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে পুনরায় রোমান সাম্রাজ্য পুনঃ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়। উক্ত বংশের শ্রেষ্ঠ পুরুষ মহান শার্লামেন (তিনি চার্লস নামেও পরিচিত) ৮০০ সালে রোমের সম্রাট পদে অধিষ্ঠিত হন। এই সাম্রাজ্যের শাসন প্রণালি, আইন-কানুন, রীতি-নীতি, প্রথা প্রভৃতি ছিল খ্রিষ্টান ধর্ম বা বাইবেল কেন্দ্রিক। সে কারণে এই সাম্রাজ্যের নাম হয়েছিল পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য ।

 

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক