রেনেসাঁস

রেনেসাঁস বা নবজাগরণ

ইউরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগ এবং আধুনিক যুগের মাঝে চিহ্নিত সীমারেখা হলো এই রেনেসাঁস বা নবজাগরণ (Revival Or Rebirth Of Learning)। ফরাসি Renaissance শব্দটির আভিধানিক বা আক্ষরিক অর্থ হলো পুনর্জন্ম। ইউরোপের ইতিহাসে প্রচলিত অর্থে রেনেসাঁস বলতে প্রাচীন গ্রিক ও রোমান জ্ঞানবিজ্ঞান (সাহিত্য, শিল্প, দর্শন, চিত্রকলা, ভাস্কর্য, বিজ্ঞান প্রভৃতি) কে জানার জন্য গভীর আগ্রহ এবং উৎসাহ সৃষ্টি হওয়াকে বুঝায়। পঞ্চদশ শতকে ইউরোপের সমাজ, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, জ্ঞানচর্চা ও চিন্তা-চেতনা এবং মানুষের জীবন জিজ্ঞাসায় যে ব্যাপক পরিবর্তনের সূচনা ঘটে, এটাকে সাধারণভাবে। ইউরোপের রেনেসাঁস বা নবজাগরণ বলা হয়ে থাকে। রেনেসাঁস এর ব্যাপ্তিকাল ছিল চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী। মধ্যযুগের স্থবির সামন্ত আর্থ-সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে নতুন সমাজ ও সংস্কৃতি নির্মাণের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়েছিল এই রেনেসাঁস। খ্রিষ্টান ধর্মের নির্দিষ্ট গণ্ডির বাইরে এসে মানুষ অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠে। সর্বোপরি এই রেনেসাঁসের ভেতর দিয়েই ইউরোপের সাধারণ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মের শাসন, শোষণ ও অত্যাচার থেকে বেরিয়ে এসে এক নতুন জীবন শুরু করে। মানুষের মননে ও মেধায় প্রধান হয়ে উঠে যুক্তিবাদ ও অনুসন্ধিৎসা। বিকশিত হতে শুরু করে মানবতাবাদ।

রেনেসাঁস প্রথমে শুরু হয়েছিল ইতালিতে। ১৪৫৩ খ্রিষ্টাব্দে অটোম্যান তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতনের পরে সেখানকার শিল্পী, সাহিত্যিক, পণ্ডিত ও বিদ্বান মনীষীরা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষত ইতালিতে এসে আশ্রয় গ্রহণ করে। কনস্টান্টিনোপলের পণ্ডিতদের জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা গোটা পশ্চিম ইউরোপ বিশেষত ইতালিতে এক নবজাগরণের সূত্রপাত ঘটায়। ইতালির জেনোয়া, ফ্লোরেন্স, ভেনিস প্রভৃতি শহর ইউরোপে রেনেসাঁস সৃষ্টিতে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। তবে এটাও বলা প্রয়োজন যে, কনস্টান্টিনোপলের পতন ইউরোপে নবজাগরণের একমাত্র কারণ নয়, অন্যতম প্রধান কারণ মাত্র। ক্রমে রেনেসাঁস ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ইউরোপে। পরবর্তী পর্যায়ে ইউরোপ থেকে এই আধুনিক সভ্যতার ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশসমূহে।

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক