দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি

মুসোলিনীর উত্থান: ১৯২২ সালে ইতালির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন ফ্যাসিস্ট পার্টির নেতা মুসোলিনি। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আসলেও সময়ের আবর্তে তিনি এক প্রভাবশালী স্বৈরশাসক বনে যান। তার ব্যক্তিগত বাহিনী 'ব্ল‍্যাক শার্টস' নির্মমভাবে বিরোধিতাকারীদের দমন করে। তিনি বিশ্বাস করতেন, "এককালীন শান্তি সম্ভব নয়, সঙ্গতও নয়।"

 

পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রবর্তন: বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রণয়ন করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯২৮ সালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির নেতা জোসেফ স্ট্যালিন সোভিয়েত ইউনিয়নে পঞ্চবার্ষিকী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেন। ১৯৩০ সালে দেশটি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে।

 

মহামন্দা (১৯২৯ -১৯৩৯ খ্রি.): ১৯২৯ সাল থেকে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশেষ করে পুঁজিবাদী দেশগুলোতে একটি বড় আকারের ছন্দপতন ঘটে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ছন্দপতনকে মহামন্দা (Great Depression) হিসেবে চিহ্নিত করেন। ১৯২৯ সালের ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কের ওয়াল স্ট্রিট স্টক এক্সচেঞ্জটি হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায়।

শেয়ারের দাম এতই নিম্নগামী হয়েছিল যে, স্টক এক্সচেঞ্জটিে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন উদ্যোক্তারা। পাশ্চাত্যের সমকালীন দ্বন ইতিহাসে এই দিনটি কালো বৃহস্পতিবার (Black Thursday) নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টক বাজারে দরপতনের পরম বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মহামন্দা শুরু হয়। পুঁজিবাদী ব্যবস্থার নিয়মই হচ্ছে এখানে মাঝে মাঝে মন্দাভাব দেখা দেয়। ঝড়ের বেগে মন্দাভাব পুরো বিশ্ব অর্থনীতিকে গ্রাস করে। মহামন্দা মোকাবেলার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট নিউ ডিল (New Deal) ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। রুজভেল্ট বিশ্বাস করতেন, "অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানে অভাব থেকে মুক্তি।” কিছু দেশের অর্থনীতি ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝিতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসলেও অনেক দেশের অর্থনীতিতে মহামন্দার প্রভাব ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু পর্যন্ত।

 

হিটলারের উত্থান: ভার্সাই চুক্তির কিছু শর্ত এমনভাবে দাঁড় করানো হয় যে যেকোনোভাবে জার্মানি যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। জার্মানরা নিজেদের দুরবস্থার কথা বুঝতে পারে এবং সোচ্চার হয়ে ওঠে। হিটলারের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক জার্মান শ্রমিক দল (National Socialist German Workers' Party) সংক্ষেপে নাৎসি পার্টি (Nazi Party) এর নেতারা জার্মানির মানুষকে বুঝিয়ে বৈপ্লবিক অবস্থানে নিয়ে যায়। হিটলার তার আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ Mein Kampf (মেইন ক্যাম্প) এ নাৎসি দলের ইশতাহার সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। মহামন্দা বিভিন্ন দেশে দুরবস্থা সৃষ্টি করলে নাৎসি পার্টি এর পূর্ণ সুযোগ গ্রহণ করে। নির্বাচনের মাধ্যমেই ১৯৩৩ সালে জার্মানির চ্যান্সেলর পদে অধিষ্ঠিত হন এডলফ হিটলার। হিটলার "এক জাতি, এক রাষ্ট্র, এক নেতা (One People, One Nation, One Leader)" মন্ত্রে পুরো জার্মানির উপর কর্তৃত্ব নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। নতুন উদ্যমে জার্মান সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠন শুরু করেন। গঠন করেন গোপন পুলিশ বাহিনী গেস্টাপো (Gestapo)। নাৎসি শাসনের জন্য যাকেই হুমকিস্বরূপ মনে হতো তাকেই গেস্টাপো ধরে নিয়ে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন করত ।

 

স্পেনের গৃহযুদ্ধ (১৯৩৬-১৯৩৯ খ্রি.): স্পেনের দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব থেকে গৃহযুদ্ধের উপক্রম হলে জাতীয়তাবাদী সামরিক নেতা জেনারেল ফ্রান্সিসকো ফ্রাঙ্কোকে অ্যাডলফ হিটলার ও বেনিটো মুসোলিনির পক্ষ থেকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেয়া হয়। অন্যদিকে স্প্যানিশ রিপাবলিকের পক্ষে লড়তে থাকা পক্ষকে সমর্থন দেয় সোভিয়েত ইউনিয়ন। গৃহযুদ্ধে জাতীয়তাবাদীরা জয়ী হলে - ক্ষমতায় আসেন জেনারেল ফ্রান্সিস্কো ফ্রাঙ্কো।

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক