যুদ্ধোত্তর প্রতিক্রিয়া
নুরেমবার্গ বিচার: এডলফ হিটলার ১৮৮৯ সালে অস্ট্রিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের প্রতি পদক্ষেপে নিষ্পেষিত, নিগৃহীত, নির্যাতিত হওয়া জার্মান যুবকের প্রতিচ্ছবি হিটলার শৈশব থেকেই বেড়ে ওঠেন তীব্র ইহুদি বিদ্বেষ নিয়ে। জার্মান পরিবারগুলোর হতশ্রী দশার পাশাপাশি তাদের সম্পদেই ইহুদিদের আয়েশ তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নেতৃত্বাধীন জার্মান নাৎসি বাহিনী ইউরোপে প্রায় ৬ মিলিয়ন ইহুদি হত্যা করে। এই গণহত্যা দ্যা হলোকাস্ট (The Holocaust) নামে পরিচিত। ১৯৪৫-৪৬ সালে জার্মানির নুরেমবার্গে নাৎসি বাহিনীর নেতাদের বিচার করা হয়। যুদ্ধাপরাধের দায়ে হত্যা করা হয় অগণিত কুশলী জার্মান সেনা নায়ককে। মানবতাবিরোধী অপরাধ বলতে গেলে এক জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে বোমা নিক্ষেপ করে মিত্রবাহিনীর তরফে যুক্তরাষ্ট্র যে অপরাধ করেছিল তার বিচার করে সাধ্য কার! সেদিক থেকে ধরতে গেলে নাৎসি জাতীয়তাবাদী যোদ্ধাদের বিচার প্রহসন বৈ কিছুই নয়।
জেনেভা কনভেনশন (Geneva Conventions): যুদ্ধ উপদ্রুত এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সাথে জনহিতকর আচরণের জন্য যে আইন রয়েছে তার একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে জেনেভা কনভেনশন। এতে চারটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি এবং তিনটি বাড়তি প্রটোকল রয়েছে। বস্তুত একবচন হিসেবে জেনেভা কনভেনশন ১৯৪৯ সালের একটি সন্ধিপত্রকে নির্দেশ করে যেটি সম্পাদিত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া এবং এর ফলাফল হিসেবে। এই সন্ধিপত্রেই চতুর্থ চুক্তিটি যোগ করা হয় এবং প্রথম তিনটি (১৮৬৪, ১৯০৬, ১৯২৯ খ্রি. সম্পাদিত) চুক্তির হালনাগদ করা হয়।
১) প্রথম জেনেভা কনভেনশন সম্পাদিত হয় ১৮৬৪ সালে, যার লক্ষ্য ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে আহত এবং অসুস্থ সৈন্যদের অবস্থার সার্বিক উন্নতি।
২) দ্বিতীয় জেনেভা কনভেনশন সম্পাদিত হয় ১৯০৬ সালে, সমুদ্রস্থ যুদ্ধক্ষেত্রে আহত, অসুস্থ এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত জাহাজের সৈন্যদের অবস্থার সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে।
৩) তৃতীয় জেনেভা কনভেনশনটি যুদ্ধবন্দীদের প্রতি আচরণ ও তাদের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসা সংক্রান্ত, ১৯২৯।
৪) চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনটি যুদ্ধাবস্থায় বেসামরিক জনগণ রক্ষার্থে সম্পাদিত, ১৯৪৯।
এই কনভেনশনগুলোর সমষ্টিকেই বলা হয় “১৯৪৯-এর জেনেভা কনভেনশনসমূহ" বা সাধারণভাবে জেনেভা কনভেনশন। একে চারটি রেডক্রস কনভেনশন নামেও অভিহিত করা হয়।