যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা বিদ্যমান। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এর মেয়াদকাল ৪ বছর। একজন ব্যক্তি কেবলমাত্র দুইবার পূর্ণ মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন। চার বছর পর পর নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখের মধ্যবর্তী মঙ্গলবারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ইলেক্টোরাল কলেজের ভোটে। ইলেক্টোরাল কলেজে ভোটের সংখ্যা ৫৩৮। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে ইলেক্ট্রোরাল কলেজের ন্যূনতম ২৭০টি ভোট প্রয়োজন হয়। প্রতিটি রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল ভোেট নির্ধারিত রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫৫টি ইলেক্টোরাল ভোট। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে প্রেসিডেন্ট এর রানিংমেট আপনা- আপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবেন। এখন পর্যন্ত কোনো নারী যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সহধর্মিনীFirst Lady of the US
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীUS Secretary of State
মার্কিন অর্থমন্ত্রীUS Secretary of the Treasury

 

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া অর্থাৎ তাকে অভিশংসন (Impeachment) করা যেতে পারে। প্রেসিডেন্টকে এই বিচারের মুখোমুখি করতে পারে কংগ্রেস। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দু'টি রাজনৈতিক দল Democratic Party (উদারপন্থী) এবং Republican Party (রক্ষণশীল)। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের ঐতিহ্যবাহী প্রতীক যথাক্রমে 'গাধা' (Donkey) ও 'হাতি' (Elephant)।

White House মার্কিন রাষ্ট্রপতির দাপ্তরিক বাসভবন। এটি ওয়াশিংটন ডিসির পেনসিলভানিয়া এভিনিউয়ে অবস্থিত। ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৭৯২ সালে। স্থপতি ছিলেন জেমস হোবান। নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবার পূর্বেই ১৭৯৯ সালে প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন মারা যান। ১৮০০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হলে ভবনটির প্রথম বাসিন্দা হন দ্বিতীয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এডামস্। হোয়াইট হাউসের পশ্চিমাংশে অবস্থিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের দাপ্তরিক কার্যালয় 'ওভাল অফিস' (Oval Office) নামে পরিচিত।

Air Force One হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র বিমান বাহিনীর প্রাতিষ্ঠানিক এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল কল সাইন, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে বহন করে এমন কোনো বিমানের জন্য প্রযোজ্য হয়।

Presidential Medal of Freedom মার্কিন প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রদত্ত যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। বিশ্বশান্তি, রাজনীতি, সংস্কৃতি, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তায় অবদান, সাংবাদিকতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে প্রদান করা হয় এই পদক।

জর্জ ওয়াশিংটন (মেয়াদ: ১৭৮৯ ১৭৯৭ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের - প্রথম প্রেসিডেন্ট। জর্জ ওয়াশিংটন রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন নির্দলীয় ছিলেন, তবে তিনি ফেডারেলিস্ট কর্মসূচির প্রতি ব্যাপকভাবে সহানুভূতিশীল ছিলেন।

থমাস জেফারসন (মেয়াদ: ১৮০১ ১৮০৯ খ্রি.) মার্কিন - যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ।;

আব্রাহাম লিংকন (মেয়াদ: ১৮৬১ ৬৫ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষোড়শ প্রেসিডেন্ট। ১৮৬৩ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাস প্রথার অবসান ঘটান এবং দাসত্ব-মোচন (Emancipation Proclamation) ঘোষণার মাধ্যমে দাসদের মুক্ত করে দেন। দাসপ্রথাকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ সময় গৃহযুদ্ধ (সময়কাল: ১৮৬১ - ১৮৬৫ খ্রি.) হয়। ১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট লিংকন তাঁর ২ মিনিট স্থায়ী বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণ (Gettysburg Address) দেন। লিংকন তাঁর দ্বিতীয় অভিষেক ভাষণে বলেন, 'With malice toward none, with charity for all, with firmness in the right, as God gives us to see the right, let us strive on to finish the work we are in'। আততায়ীর গুলিতে তিনি । নিহত (১৫ এপ্রিল, ১৮৬৫ খ্রি.) হন। তিনিই ছিলেন আততায়ীর  হাতে নিহত প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট (মেয়াদ: ১৯৩৩- ৪৫ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি টানা ৪ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘ ১২ বছর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি দুইবারের অধিক সময়ের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

জন এফ কেনেডি (মেয়াদ: ১৯৬১ ৬৩ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫তম প্রেসিডেন্ট। কেনেডি তাঁর অভিষেক ভাষণে বলেন, "Ask not what your country can do for you, Ask what you can do for your country" তিনি আরও বলেন, "Let us never negotiate out of fear. But let US never fear to negotiate"। ১৯৬৩ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

রিচার্ড নিক্সন (মেয়াদ: ১৯৬৯-৭৪ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম প্রেসিডেন্ট। নিক্সন ছিলেন রিপাবলিক দলের প্রার্থী। নির্বাচনি প্রচারাভিযান চলাকালে ১৯৭২ সালের ১৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান দল এবং প্রশাসনের পাঁচ সদস্য ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াটার গেট নামক বাণিজ্যিক ভবনে অবস্থিত বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সদর দপ্তরে আড়িপাতার যন্ত্র বসায়। ওয়াশিংটন পোস্টে এ খবর প্রকাশিত হলে তা আলোড়ন সৃষ্টি করে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট নিক্সন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। ইতিহাসে এ ঘটনা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারি (Watergate scandal) নামে পরিচিত। অভিশংসনের হুমকির মুখে নিক্সন পদত্যাগ করেন। সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন জেরাল্ড ফোর্ড। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র প্রেসিডেন্ট যিনি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হননি। নিক্সন ও জেরাল্ড ফোর্ডের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন হেনরি কিসিঞ্জার। কিসিঞ্জারের বিখ্যাত গ্রন্থ 'White House Years' ।

জিমি কার্টার (মেয়াদ: ১৯৭৭ ১৯৮১ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ' White House Diary'।

রোনাল্ড রিগ্যান (মেয়াদ: ১৯৮১-৮৯ খ্রি.) যুক্তরাষ্ট্রের ৪০তম প্রেসিডেন্ট। তিনি একজন অভিনেতা ছিলেন।

বিল ক্লিনটন (মেয়াদ: ১৯৯৩ ২০০১ খ্রি.) যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট। তিনি সৎ পিতার পদবি ব্যবহার করতেন। তাঁর আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'মাই লাইফ' (My Life)। ক্লিনটনের সহধর্মিনীর নাম হিলারি। হিলারির আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'লিভিং হিস্ট্রি' (Living history)।

জর্জ ডব্লিউ বুশ (মেয়াদ: ২০০১-২০০৯ খ্রি.) যুক্তরাষ্ট্রের ৪৩তম - প্রেসিডেন্ট। বুশের মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন কন্ডোলিৎসা রাইস। কন্ডোলিৎসা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্র মহিলা পররাষ্ট্র মন্ত্রী।

বারাক ওবামা (মেয়াদ: ২০০৯-২০১৭ খ্রি.) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের  ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। কেনীয় বংশোদ্ভূত ওবামা ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট। ২০০৯ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ Dreams from My Father, The Audacity of Hope, Change You Can Believe In, A Promised Land প্রভৃতি।


ডোনাল্ডট্রাম্প (মেয়াদ: ২০১৭ ২০২১) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম রাষ্ট্রপতি। তিনি রিপাবলিকান দলের ব্যানারে নির্বাচিত ১৯তম প্রেসিডেন্ট। তাঁর সহধর্মিনীর নাম মেলানিয়া ট্রাম্প। স্লোভেনীয় বংশোদ্ভূত মেলানিয়া ট্রাম্প একজন মডেল ছিলেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইবার (২০১৯ ও ২০২১ সালে) পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভে অভিশংসিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে মোট ৩ জন মার্কিন প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ কর্তৃক অভিশংসিত হন। তারা হলেন যথাক্রমে অ্যান্ড্র জনসন, বিল ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটের বিচারে তারা কেউই দোষী সাব্যস্ত হয়নি।

জো বাইডেন (মেয়াদ: ২০২১ বর্তমান) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের - তা ৪৬তম রাষ্ট্রপতি। ১৯৪২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসেলভেনিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম যুক্তরাজ্য সফর করেন ।

Reference: জর্জ MP3 আন্তর্জা‌তিক