লোহা বা আয়রন

সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ লোহা ধাতুরূপে বিশেষ কাজে লাগে না। যে লোহা ধাতু রূপে ব্যবহৃত হয় তাহার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য ধাতু মিশ্রিত থাকে। লোহার মধ্যে কার্বন ও অন্যান্য ধাতুর পরিমাণ অনুযায়ী লোহাকে প্রধানত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়। যথা-

১) কাস্ট আয়রন (Cast iron) বা পিগ আয়রন (Pig iron) বা ঢালাই লোহা : এটি একটি অবিশুদ্ধ লোহা। এর মধ্যে ২ - ৪.৫% কার্বন থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণ সিলিকন, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার এবং ফসফরাস থাকে। কাস্ট আয়রন ভঙ্গুর বলিয়া যে সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙ্গিবার বা ফাটিবার সম্ভাবনা কম তা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। গিয়ার, পিস্টন রিং, ইস্ত্রি করার যন্ত্র, ছাঁচে ঢালাই করা দ্রব্য, যেমন- লোহার নল, উনুনের শিক প্রভৃতি তৈরিতে কাস্ট আয়রন ব্যবহৃত হয়। ব্লাস্ট ফার্নেসের মাধ্যমে কাস্ট আয়ন উৎপাদন করা হয় ।

২) স্টীল বা ইস্পাত (Steel) : এতে লোহার সাথে ০.১৫ - ১.৫% কার্বন থাকে। ইস্পাতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো একে পান দেওয়া ও জোড়া লাগানো যায় এবং এটি দিয়ে স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা যায় । কাস্ট আয়রন এবং পিগ আয়রনে এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকে না। ইস্পাতকে লাল তপ্ত করে গরম করার পর পানিতে বা তেলে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা করলে ইস্পাত কঠিন হয়ে যায় এবং কাচের ন্যায় ভঙ্গুরতা লাভ করে। এই ইস্পাতকে আবার নিম্ন তাপাংকে (২০০° - ৩৫০° সে.) উত্তপ্ত করলে ইস্পাতের ভঙ্গুরতা দূর হয় এবং পুনরায় দৃঢ়তা লাভ করে । এই পদ্ধতিকে ইস্পাতের পানদান (Tempering of Steel) বলে । ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বেসিমার পদ্ধতিতে ইস্পাত উৎপাদন শুরু হলে এটি সস্তা ও বহুল ব্যবহৃত ধাতুতে পরিণত হয়। ইস্পাত রেল এবং মোটর যন্ত্রযান, গাড়ীর স্প্রিং, যুদ্ধাস্ত্র, ডাক্তারী যন্ত্রপাতি (যেমন: ছুরি, কাঁচি, ব্লেড), করাত, সেতু তৈরিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।

৩) রট আয়রন বা পেটা লোহাঃ এই জাতীয় লোহা অনেকটা বিশুদ্ধ । এর মধ্যে ০.১ - ০.১৫% কার্বন থাকে। এটি নমনীয় ও দৃঢ় এবং ইহার দ্বারা ওয়েল্ডিং এর কাজ করা সম্ভব বলিয়া তড়িৎ চুম্বকের যন্ত্রপাতি, শিকল, তার, গেট, বল্টু, পেরেক, তালা-চাবি তৈরি করার জন্য রট আয়রন ব্যবহৃত হয়।

Reference: MP3 বিজ্ঞান