স্ফুটনাংকের উপর চাপের প্রভাব

স্ফুটনাঙ্কের উপর চাপের প্রভাবঃ খোলা পাত্রে রাখা তরলের ওপরে কিছু বাষ্প থাকে। পাত্রটা যদি শূন্যস্থানে থাকত তাহলে তরলের উপরিস্থিত বাষ্পকে ঠেকিয়ে রাখার মতো কোনো চাপ থাকত না, ফলে সমস্ত তরল বাষ্প হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবে বায়ুচাপ তরলের বাষ্প অণুগুলোকে ছড়িয়ে পড়তে দেয় না। কক্ষ তাপমাত্রায় পানির বাষ্পচাপ বায়ুর চাপের তুলনায় কম হয়, এই কারণে পানির বাষ্প বায়ুর অণুগুলোকে সরিয়ে মুক্ত হতে পারে না কিন্তু তাপমাত্রা যতই বাড়ানো হয়, পানির গড় গতিশক্তি বৃদ্ধি পায় অর্থাৎ আরও বেশি সংখ্যক অণু বাষ্পে যেতে পারে। ফলে পানির উপরিস্থিত বাষ্পচাপও বাড়তে থাকে। একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় যখন পানির বাষ্পচাপ উপরিস্থিত বায়ুর চাপের সমান হয়, তখন বাষ্পের অণুগুলো বাতাসের অণুগুলোকে সরিয়ে মুক্ত হতে পারে। এইভাবে যতই তরলের বাষ্প মুক্ত হতে থাকে, তরলস্থিত অণুও ততই বাষ্পে যেতে থাকে । এক সময় সমস্ত পানি বাষ্পে পরিণত হয় । আর এই সব ঘটনাই ঘটে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় । সেই তাপমাত্রাকে তরলের স্ফুটনাংক বলে । এজন্য চাপ বাড়লে তরলের স্ফুটনাংক বেড়ে যায় এবং চাপ কমলে স্ফুটনাংক কমে যায়। পাহাড় বা পর্বতের উপর বায়ুর চাপ কম থাকায় পানির স্ফুটনাংক কমে যায়। স্বাভাবিক বায়ুমণ্ডলীয় চাপে পানির স্ফুটনাঙ্ক ১০০° সে.। কিন্তু বায়ুর চাপ কম থাকায় এভারেস্ট পর্বতের উপর পানি ৭০° সে. উষ্ণতায় ফুটতে থাকে। পাহাড়ের উপর পানির স্ফুটনাঙ্ক কম বলে কম তাপমাত্রায় পানি ফুটতে শুরু করে, কিন্তু মাছ, মাংস, ডিম প্রভৃতি দ্রুত সিদ্ধ হয় না। এজন্য সুউচ্চ পাহাড় বা পর্বতের চূড়ায় রান্না করা দূরূহ হয়ে পড়ে। ঢাকনা দেয়া পাত্র বা প্রেসার কুকার ব্যবহার করে এই অসুবিধা কাটানো যায়। প্রেসার কুকারে উচ্চচাপে পানির স্ফুটনাংক বৃদ্ধি পায়। ফলে রান্না তাড়াতাড়ি হয়। পৃথিবীপৃষ্ঠ হতে যত উপরে উঠা যায় তত বায়ুর চাপ কমতে থাকে । কাজেই উপরে উঠলে দেহের ভেতরের চাপ বাহিরের বায়ুর চাপ অপেক্ষা অধিক হলে দেহের রক্তনালীতে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। এ চাপে নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। এজন্য পর্বত আরোহীকে আটসাট পোশাক পরিধান করতে হয় । সমুদ্রতলে এবং ভূ-পৃষ্ঠ হতে ২ মাইল উঁচুতে (যেমন: পাহাড়ে) বায়ুতে অক্সিজেনের শতকরা সংযুক্তি প্রায় সমান (২১%)। কিন্তু ভূ-পৃষ্ঠ হতে ২ মাইল উচ্চতায় বায়ুমণ্ডলীয় চাপ সমুদ্রতলের বায়ুমণ্ডলীয় চাপ অপেক্ষা ৩০% কম অর্থাৎ উঁচু স্থানে বায়ুর অণুসমূহ পরস্পর হতে দূরে অবস্থান করে । চাপ কম হওয়ায় বায়ু হতে কম অক্সিজেন শরীরের রক্তনালীতে প্রবেশ করে। ফলে শ্বাসকষ্ট হয়। এজন্য পর্বতারোহীরা উঁচু পর্বতে উঠতে গেলে সিলিন্ডারে করে অক্সিজেন নিয়ে যায়।

Reference: MP3 বিজ্ঞান