উত্তর আটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organization - NATO) প্রতিষ্ঠিত হয় ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯। সদর দপ্তর স্থাপিত হয় যুক্তরাজ্যের লন্ডনে। (বি.দ্র.- ন্যাটোর বর্তমান সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে)। পশ্চিম ইউরোপের পুঁজিবাদী তথা গণতান্ত্রিক দেশগুলো গঠন করে ন্যাটো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল এর নেতৃত্বে। ন্যাটো তার যাত্রা শুরু করেছিল ১২টি দেশ নিয়ে। দেশগুলো হলো বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ব্রিটেন, আইসল্যান্ড, ইতালি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পর্তুগাল, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্র। ন্যাটো গঠনের পিছনে কাজ করে সোভিয়েত আগ্রাসন রোধ তথা সমাজতন্ত্রের প্রসার রোধ করার ব্যাপারটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজতন্ত্রের প্রসার রোধকল্পে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো ধারক নীতি (Policy of Containment) গ্রহণ করে। মার্কিন কূটনীতিক জর্জ এফ কেনান ছিলেন এই নীতির প্রবক্তা। ধারক নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৪৭ সালে ১২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান কংগ্রেসের সভায় তাঁর বিখ্যাত 'ট্রুম্যান মতবাদ' (Truman Doctrine) ঘোষণা করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর গ্রিস এবং তুরস্কে কমিউনিস্টদের প্রভাব বাড়ছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যান গ্রিস ও তুরস্কের পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেশ দুটোকে অর্থনৈতিক সাহায্য প্রদানের সুপারিশ করেন। ট্রুম্যান মতবাদের আশু করণীয় গ্রিক ও তুরস্ককে আর্থিক সাহায্য প্রদান হলেও এর মৌখিক অঙ্গীকার ছিল বিশ্বব্যাপী। ১৯৫২ সালে গ্রিস এবং তুরস্ক (মুসলিম দেশ) ন্যাটোতে যোগ দেয়। ট্রুম্যানের এই নীতি আর্থিকভাবে প্রয়োগের জন্য ১৯৪৭ সালের জুন মাসে মার্কিন সেক্রেটারী জেনারেল জর্জ মার্শাল ঘোষণা করেন, ইউরোপ পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করবে। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো মার্শাল প্লান এর অন্তর্ভুক্ত হয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের চাপে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো মার্শাল প্লানে যোগদানে বিরত থাকে। মার্শাল প্লানের পর ১৯৪৮ সালে বেলজিয়াম (Belgium), নেদারল্যান্ড (Netherlands), লুক্সেমবার্গ (Luxemburg) একটি সাধারণ শুল্ক নীতি গ্রহণ করে বাণিজ্য উন্নতির জন্য বেনেলাক্স (BeNeLux) গঠন করে। ১৯৪৮ সালের মার্চে ব্রিটেন ও ফ্রান্স এতে যোগ দিলে ব্রাসেলস সন্ধিজোট গঠিত হয়।