বর্ণবাদ (Racism)
দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী যুগ (Apartheid era in South- Africa): ১৯৪৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় 'বর্ণবাদ নীতি' চালু হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণকে শ্বেতাঙ্গ (White), কৃষ্ণাঙ্গ (Black), রঙ্গিন (Coloured), এশীয় (Asian)- এই চার ভাগে ভাগ করা হয়। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার হরণ করে সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা শাসন ক্ষমতা কুক্ষিগত করে। ১৯৯৪ সালে সকল বর্ণের লোকের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণ সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকার। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম রাষ্ট্রপতি। ফলে। ৩৪২ বছরের (১৬৫২ - ১৯৯৪ খ্রি.) শ্বেতাঙ্গ শাসনের অবসান হয়।
নেলসন ম্যান্ডেলা (১৮ জুলাই, ১৯১৮ ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩)
নেলসন ম্যান্ডেলা মাদিবা, তাতা, খুলু, ডালিভুঙ্গা, রোলিহাহা নামেও পরিচিত। ১৯৬২ সালে বর্ণবাদী সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে এবং ১৯৬৪ সালে অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। প্রচণ্ড প্রতিবাদের মুখে বর্ণবাদী সরকার ১৯৯০ সালে তাঁকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। দীর্ঘ ২৭ বছরের কারাজীবনের মধ্যে তিনি ১৮ বছর অন্তরীণ ছিলেন দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের রোবেন (Robben) দ্বীপে। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল African National Congress - ANC (প্রতিষ্ঠাকাল: ১৯১২ খ্রি.) এর সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর আত্মত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ 'Long walk to Freedom'। তিনি 'Say yes for children' এর প্রতিষ্ঠাতা। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অসামান্য আত্মত্যাগের জন্য ১৯৯৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। তাঁর সম্মানে এইডস বিরোধী একটি প্রচারণার নামকরণ করা হয় '46664' (নামের তাৎপর্য: ম্যান্ডেলা 466 নং কয়েদি ছিলেন 1964 সালে)। জন্মস্থান কুনু (দক্ষিণ আফ্রিকা)-তেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ শ্বেতাঙ্গ প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রেডরিক উইলিয়াম ডি ক্লার্ক (F. W. de Klerk)। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম মাসেই ম্যান্ডেলা দেশটিকে 'রেইনবো নেশন' হিসেবে উল্লেখ করেন। রংধনুর সাত রঙের সুষম সম্মিলনের মতোই জাতিগত বৈচিত্র্যের মধ্যেও দেশটির প্রাণে যেন ঐক্যের সুর ধ্বনিত হয় সেটাই ছিল ম্যান্ডেলার চাওয়া। উল্লেখ্য 'রেইনবো নেশন' শব্দযুগল প্রথম ব্যবহার করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদ বিরোধী নেতা ধর্মযাজক ডেসমন্ড টুটু। টুটু শান্তিতে নোবেল পুরস্কার (১৯৮৪) লাভ করেন।
Ku Klux Klan (সংক্ষেপে KKK) যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী গোষ্ঠী।
Bradley effect হলো যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ভোটারদের মতামত জরিপ এবং নির্বাচনের ফলাফল গুলোর বৈষম্য বিষয়ক একটি তত্ত্ব। ১৯৮২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন শ্বেতকায় জর্জ ডুকমেজিয়ান এবং কৃ ষ্ণকায় ব্রাডলি। শ্বেতকায় ভোটাররা নির্বাচনপূর্ব জরিপকালে কৃষ্ণকায় ব্রাডলিকে ভোট দেওয়ার কথা বললেও তারা প্রকৃ তপক্ষে শ্বেতকায় ডুকমেজিয়ানকে ভোট দিয়েছিলেন। নিজেদের 'বর্ণবাদী' পরিচয় দিতে চাননি বলে তাঁরা শুধু মুখে ব্রাডলিকে সমর্থনের কথা বলেছিলেন।
বর্ণবাদ বিরোধী বিশ্ব সম্মেলন: জাতিগত মতাদর্শ ও আচরণের বিরুদ্ধে সংগ্রামকে জোরদার করার লক্ষ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক আয়োজিত হয় বর্ণবাদ বিরোধী বিশ্ব সম্মেলন। ১৯৭৮ ও ১৯৮৩ সালে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে। ২০০৯ সালে ডারবান পর্যালোচনা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।
নাগরিক অধিকার আইন: যুক্তরাষ্ট্রের নিগ্রোদের অধিকার আদায় আন্দোলনের অহিংসবাদী নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র। আমেরিকান-আফ্রিকানদের নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ১৯৬৩ সালের ওয়াশিংটনের লংমার্চে "I have a dream that one day this nation will rise up and live out the true meaning of its creed: "We hold these truths to be self-evident: that all men are created equal." শীর্ষক বিখ্যাত ভাষণটি দেন। ১৭ মিনিটের স্থায়ী এই ভাষণের প্রভাবেই ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিক আইন ও ১৯৬৫ সালে ভোটাধিকার আইন প্রণীত হয়। লুথার। কিং ১৯৬৪ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৬৮ সালের ৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের টেনিসি অঙ্গরাজ্যের মেমফিস শহরে সংগ্রামের শীর্ষ মুহুর্তে এক আততায়ীর গুলিতে তিনি নিহত হন।
মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের অমর উক্তি-
#Black Lives Matter (BLM): কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি পুলিশি নৃশংসতা বর্ণবাদী সহিংসতার প্রতিবাদে অহিংস সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন 'হ্যাশট্যাগ ব্যাক লাইভস ম্যাটার' (#Black Lives Matter)। ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় নিরপরাধ কৃষ্ণাঙ্গ কিশোর ট্রেইভন মার্টিনকে গুলি করে হত্যা করে জর্জ জিমারম্যান। কিন্তু জর্জ জিমারম্যানকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। এর পরপরই ২০১৩ সালের জুলাইয়ে। সামাজিকমাধ্যমে শুরু হয় #Black Lives Matter (কৃ ষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান) আন্দোলন। পরবর্তীতে তা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে এরিক গার্নার নামে এক কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে নিউইয়র্কে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পূর্বে তার শেষবাক্য ছিল, 'আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।' (I can't breathe) ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে একজন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা জর্জ ফ্লয়েড নামক একজন কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিককে শ্বাসরোধ করে একই কায়দায় হত্যা করে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণে ফ্লয়েডও বারবার বলছিলেন, 'আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।' বর্ণবাদবিরোধী শ্লোগানে পরিণত হয় 'আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।'