স্থিতিস্থাপকতা (Elasticity)
বস্তুর যে ধর্ম উহার উপর প্রযুক্ত বলের ক্রিয়ায় তার আকার বা আয়তন বা উভয়েরই পরিবর্তনের প্রচেষ্টাকে বাধা দেয় এবং প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে তার পূর্বের আকার বা আয়তন ফেরত পায়, তাকে স্থিতিস্থাপকতা বলে। বাহ্যিক বলের বিরুদ্ধে যে বস্তুর বাধা প্রদানের ক্ষমতা বেশি সেই বস্তুর স্থিতিস্থাপকতা বেশি। আমরা রাবারের তারকে খুব সহজেই টেনে লম্বা করতে পারি কিন্তু ইস্পাতের তারকে টেনে লম্বা করতে অনেক বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। ইস্পাতের স্থিতিস্থাপকতা তাই রাবারের চেয়ে অনেক বেশি।
প্রযুক্ত বল অপসারণ করলে যে সব বিকৃত বস্তু সম্পূর্ণভাবে তাদের পূর্বাবস্থা ফিরে পায়, তাদেরকে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু (Perfectly Elastic body) বলে । বাস্তবে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু পাওয়া সম্ভব নয়, তবে সাধারণত রাবার (অন্য নাম Elastomer) কে পূর্ণ স্থিতিস্থাপক বস্তু ধরা হয়। এই ধর্মের জন্য রাবারকে গাড়ির টায়ার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
যে সব বস্তুর উপর বাহির থেকে যে কোনো পরিমাণ বল প্রয়োগ করা সত্ত্বেও আকার বা আকৃতির কোনো পরিবর্তন ঘটে না, তাদের পূর্ণ দৃঢ় বস্তু (Perfectly Rigid body) বলে । বাস্তবে পূর্ণ দৃঢ় বস্তু পাওয়া না গেলেও কাচ, ইস্পাত প্রভৃতিকে পূর্ণ দৃঢ় বস্তু ধরা হয় ।
বিকৃতি (Strain): বল প্রয়োগের ফলে কোন বস্তুর একক মাত্রার যে পরিবর্তন হয়, তাই বিকৃতি ।
পীড়ন (Stress) : বাহ্যিক বলের প্রভাবে কোনো বস্তুকে বিকৃত করা হলে বস্তুর ভিতর এক প্রকার বল সৃষ্টি হয় যা প্রযুক্ত বলের বিরুদ্ধে ক্রিয়া করে বস্তুকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায় । একক ক্ষেত্রফলের উপর উদ্ভুত এ প্রতিরোধকারী বলের মান হলো পীড়ন। M.K.S পদ্ধতিতে পীড়নের একক নিউটন/বর্গ.মি (N/m2)।
হুকের সূত্র : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে কোন বস্তুর পীড়ন ও বিকৃতি সমানুপাতিক ।
ইয়ংয়ের স্থিতিস্থাপক গুণাংক : স্থিতিস্থাপক সীমার মধ্যে বস্তুর দৈর্ঘ্য পীড়ন এবং দৈর্ঘ্য বিকৃতির অনুপাত একটি ধ্রুবক সংখ্যা। এই ধ্রুবক সংখ্যাকে বস্তুর উপাদানের ইয়ংয়ের গুণাংক বলে। যার ইয়ংয়ের গুণাংক যত বেশি তার স্থিতিস্থাপকতা তত বেশি। উদাহরণ: ইয়ংয়ের গুণাঙ্ক রাবারের চেয়ে ইস্পাতের বেশি।