চর্যাপদ

চর্যাপদ

প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। এর ভাষা ও বিষয়বস্তু দুর্বোধ্য এবং এর কবিরা ছিলেন বৌদ্ধ সাধক। এতে বিধৃত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্বকথা। এ সময়ের সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গোষ্ঠী কেন্দ্রিকতা ও ধর্মনির্ভরতা। ধর্মের বিষয়টি সমাজজীবনের চিন্তাভাবনাকে নিয়ন্ত্রিত করেছে, তাই সাহিত্যে ধর্মের কথা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

 

গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর

প্র. প্রাচীন যুগ কোন সময়কালকে ধরা হয়?

উ.  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে, ৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।

      ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে, ৯৫০-১২০০ খ্রি.।

      ড. সুকুমার সেনের মতে, ৯০০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ।

প্র. বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন কোনটি? 

উ. চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা চর্যাগীতিকোষ বা চর্যাগীতি বা চর্যাপদ।

প্র. চর্যাপদ কী ও কারা এগুলো রচনা করেন?

উ. চর্যাপদ গানের সংকলন বা সাধন সংগীত যা বৌদ্ধ সহজিয়াগণ রচনা করেন। এতে বিধৃত হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মের তত্ত্বকথা। চর্যাচর্যবিনিশ্চয় বা এ গানের সংকলন বা সাধন সংগীতের সাহায্যে কোনটি চর্য (আচরণীয়) আর কোনটি অ-চর্য (অনাচরণীয়) তা বিনিশ্চয় (নির্ণয়) করা যেতে পারে।

প্র. চর্যাপদ নেপালে পাওয়ার কারণ কী?

উ. ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, সেন রাজারা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কিন্তু চর্যাপদের রচয়িতারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাই ধর্মীয় সংকীর্ণতায় নিমজ্জিত সেন সময়কালের কতিপয় হিন্দু ব্রাহ্মণ বৌদ্ধদের ওপর নিপীড়ন চালায়। আবার, ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজীর বাংলায় আগমন ঘটলে মুসলিম তুর্কিদের আক্রমণের ভয়ে বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ প্রাণের ভয়ে পুঁথিপত্র নিয়ে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে পালিয়ে যায়। একারণেই চর্যাপদ নেপালে পাওয়া যায়।

প্র. চর্যাপদ আবিষ্কারের ইতিহাস সম্পর্কে কী জান?

উ. ১৮৮২ সালে 'বিবিধার্থ পত্রিকার সম্পাদক রাজেন্দ্রলাল মিত্র Sanskrit Buddhist Literature in Nepal গ্রন্থে নেপালে প্রাপ্ত সংস্কৃত ভাষায় রচিত বিভিন্ন বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন। রাজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার বাংলা, বিহার ও আসাম অঞ্চলের পুঁথি সংগ্রহের দায়িত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগীয় প্রধান মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর উপর। তিনি তৃতীয়বারের (প্রথমবার-১৮৯৭, দ্বিতীয়বার-১৮৯৮) প্রচেষ্টায় ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগারে নতুন কিছু পুঁথির সন্ধান পান যা 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়', 'ডাকার্ণব', 'সরহপাদের দোহা' ও 'কৃষ্ণপাদের দোহা' নামে পরিচিত। এর মধ্যে 'চর্যাপদ' বাংলা ভাষায় এবং বাকী তিনটি অপভ্রংশ ভাষায় রচিত। ১৯১৫ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে নেপাল থেকে প্রাপ্ত তালপাতার পুঁথির একটি তালিকা A Catalogue of Palm Leaf and selected Paper MSS. Belonging to the Durbar Library, Nepal নামে প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে এটি তাঁর সম্পাদনায় ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) কলকাতার 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থেকে 'হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা' নামে প্রকাশিত হয়।  

প্র. চর্যাপদ আবিষ্কৃত হয় কবে ও কোথা থেকে?

উ. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার (রয়েল লাইব্রেরি) থেকে 'চর্যাপদ' আবিষ্কার করেন।

প্র. চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?

উ. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (১৮৫৩-১৯৩১)। মহামহোপাধ্যায় তাঁর উপাধি।

প্র. চর্যাপদ্র কবে ও কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?

উ. মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে (১৩২৩ ব.) কলকাতার 'বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ' থেকে 'চর্যাচর্যবিনিশ্চয়', 'ডাকার্ণব', 'সরহপাদের দোহা' ও 'কৃষ্ণপাদের দোহা' গ্রন্থের সম্মিলনে 'হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা' নামে প্রকাশিত হয়।

প্র. চর্যাপদ কবে রচিত হয়?

উ.  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ৬৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।

      সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ৯৫০-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ।

      ড. সুকুমার সেনের মতে, ৯০০-১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ।

প্র. চর্যাপদ রচনার সময় কোন রাজারা ক্ষমতায় ছিল?

উ. চর্যাপদ রচনার সময়কালে বাংলায় পাল রাজারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁরা প্রায় চারশত বছর বাংলা শাসন করেছে।

প্র. চর্যাপদের কবি/পদকর্তা কতজন?

উ.  ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, ২৩ জন।

      ড. সুকুমার সেনের মতে, ২৪ জন।

 

Reference: অগ্রদূত বাংলা