বিদ্যাপতি (১৩৮০ - ১৪৬০)

মিথিলার রাজসভার কবি, বৈষ্ণব কবি ও পদসঙ্গীত ধারার রূপকার বিদ্যাপতি। তিনি বাঙালি না হয়েও বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান দখল করে আছেন। বিদ্যাপতির রচিত পদ চৈতন্যদেব বিশেষভাবে শ্রবণ করতেন। তাঁর কৌলিক উপাধি ঠক্কর বা ঠাকুর।

  • বিদ্যাপতি আনুমানিক ১৩৮০ খ্রিষ্টাব্দে মিথিলার দ্বারভাঙা জেলার সীতাময়ী মহকুমার বিসফী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তিনি পদাবলির প্রথম কবি।
  • মিথিলার রাজা কীর্তি সিংহ কর্তৃক সভাপণ্ডিত নিযুক্ত হন এবং রাজা দেব সিংহ ও শিব সিংহের রাজসভার কবি ছিলেন।
  • তিনি মৈথিলি, অবহটঠ ও সংস্কৃত ভাষায় পদ রচনা করেন।
  • তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ব্রজবুলিতে রচিত রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ রচনা।
  • বৈষ্ণব পদাবলির অধিকাংশ পদ ব্রজবুলি ভাষায় রচিত।
  • বিদ্যাপতির উপাধি 'কবিকণ্ঠহার' (রাজা শিবসিংহ কর্তৃক), 'মৈথিল কোকিল', 'অভিনব জয়দেব'।
  • তাঁর রচিত কাব্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'রাজকণ্ঠের মণিমালা' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
  • তিনি আনুমানিক ১৪৬০ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান।

 

প্র. 'মৈথিল কোকিল' কাকে বলা হয়?

উ. মিথিলার কবি বিদ্যাপতিকে 'মৈথিল কোকিল' বলা হয়। তিনি পদাবলির আদি বৈষ্ণব কবি এবং পদসঙ্গীত ধারার রূপকার। তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি পঙ্ক্তিও না লিখেও বাংলায় স্মরণীয় কবি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদ রচনা করেন।

প্র. বৈষ্ণব পদাবলি ধারায় বিদ্যাপতির বিশেষত্ব কী? [৩৫/৩৩/৩২/৩০/২৯তম বিসিএস লিখিত]

উ. মধ্যযুগের সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সম্পদ বৈষ্ণব পদাবলির বিখ্যাত কবি ও পদসঙ্গীত ধারার রূপকার বিদ্যাপতি। তিনি ছিলেন মিথিলার রাজসভার কবি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদ রচনা করেন। ব্রজবুলি হলো বাংলা ও মৈথিলি ভাষার সংমিশ্রণে তৈরি একপ্রকার কৃত্রিম কবিভাষা। তাঁর কাব্যে অলৌকিক প্রেমকাহিনীকে মানবিক প্রেমকাহিনী হিসেবে রূপ দিয়েছেন। তিনিই প্রথম কাম-প্রেমরসের বিচিত্র বর্ণালি জগৎ তৈরি করেন। তিনি পদাবলির প্রথম কবি। তাঁর রচিত রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক প্রেমলীলা পদের মধ্যে রাধার বয়ঃসন্ধি, অভিসার, আক্ষেপানুরাগ, বিরহ ও ভাবসম্মিলনের পদগুলো বিশেষ উৎকর্ষপূর্ণ। রাধা-কৃষ্ণ প্রেমলীলা বিষয়ক যে উৎকৃষ্ট পদাবলি রচনা করেছেন তাই তাকে অমরতা দান করেছে।

প্র. বিদ্যাপতির সাহিত্যকর্মসমূহ কী কী?

উ. 'কীর্তিলতা', 'কীর্তিপতাকা', 'পুরুষপরীক্ষা', 'শৈবসর্বস্বসার', 'গঙ্গাবাক্যাবলী', 'লিখনাবলী', 'ভাগবত', 'দুর্গাভক্তিতরঙ্গিণী', 'বিভাগসার'।

প্র. ব্রজবুলি কী? ৩৬তম বিসিএস লিখিত।

উ. ব্রজবুলি হলো বাংলা ও মৈথিলি ভাষার সংমিশ্রণে তৈরি একপ্রকার কৃত্রিম কবিভাষা। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি এ ভাষার স্রষ্টা। এ ভাষা কখনো মানুষের মুখের ভাষা ছিল না; সাহিত্যকর্ম ব্যতীত অন্যত্র এর ব্যবহার নেই। এতে কিছু হিন্দি শব্দ আছে। এ ভাষায় চণ্ডীদাস, বিদ্যাপতি, গোবিন্দ দাস, জ্ঞানদাস বিভিন্ন বৈষ্ণব পদ রচনা করেন।  

 

বিদ্যাপতির উক্তি

'এ সখি হামারি দুঃখের নাহি ওর। 

এ ভরা বাদর                   মাহ ভাদর 

            শূন্য মন্দির মোর।'

Reference: অগ্রদূত বাংলা