রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩)

সমাজসংস্কারক, ধর্মসংস্কারক, চিন্তাবিদ, বহুভাষাবিদ পণ্ডিত ও বাংলা গদ্যের প্রস্তুতিকালীন লেখকদের অন্যতম রাজা রামমোহন রায়। সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন, জুরির বিচার, সম্পত্তিতে স্ত্রীলোকদের অধিকার, পাশ্চাত্য শিক্ষার সম্প্রসারণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে তিনি পথিকৃৎ। মূলত ধর্মসংস্কার ও সমাজসচেতনতার বশবর্তী হয়ে বাংলা গদ্য লিখেছেন।

  • রাজা রামমোহন রায় ২২ মে, ১৭৭২ সালে হুগলী জেলার রাধানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তাঁর ছদ্মনাম শিবপ্রসাদ রায়। পিতা- রাধাকান্ত রায়, মাতা- তারিণী দেবী।
  • তিনি পাঠ্য পুস্তকের বাইরে সর্বপ্রথম বাংলা গদ্যরীতির ব্যবহার করেন।
  • বাংলা প্রবন্ধ রচনার প্রথম কৃতিত্ব রাজা রামমোহন রায়ের।
  • তিনি 'ব্রাহ্মণ সেবধি' (১৮২১), 'সম্বাদ কৌমুদী' (১৮২১), 'মিরাৎ-উল-আখবার' (১৮২২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন।
  • তার একেশ্বরবাদের ওপর আরবি ও ফারসি ভাষায় লিখিত 'তুহফাঊল মুয়াহহিদ্দীন' ১৮০৩ সালে প্রকাশিত হয়।
  • তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৮৩৩ সালে মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ব্রিস্টলে স্টেপল্টনে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।

 

প্র. রাজা রামমোহন রায় কী কী প্রতিষ্ঠা করেন?

উ. রাজা রামমোহন রায় যা যা প্রতিষ্ঠা করেনঃ

  • একেশ্বর উপাসনার লক্ষ্যে 'আত্মীয়সভা'- ১৮১৫।
  • দেশে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে 'হিন্দু কলেজ'- ১৮১৭।
  • 'ইউনিটারিয়ান কমিটি' নামক ধর্মসভা- ১৮২১।
  • 'অ্যাংলো হিন্দু স্কুল'-১৮২৩।
  • প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সহায়তায় 'ব্রাহ্ম-সমাজ'- ১৮২৮।

প্র. রামমোহন রচিত ব্যাকরণ কোনটি?

উ. 'গৌড়ীয় ব্যাকরণ' (১৮৩৩): এটি ১৮২৬ সালে প্রথম ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়।

প্র. রামমোহন রচিত সাহিত্যকর্মের পরিচয় দাও?

উ. 'বেদান্ত গ্রন্থ' (১৮১৫): এটি তাঁর প্রথম গ্রন্থ। পৌত্তলিকতা যে হিন্দু ধর্মের মুখ্য বিষয় নয়, ব্রহ্মই একমাত্র তত্ত্ব ও উপাস্য তা প্রমাণের জন্য তিনি এ গ্রন্থটি রচনা করেন।

'গোস্বামীর সহিত বিচার' (১৮১৮): সতীদাহ প্রথার অসারতা প্রসঙ্গে।

'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ' (১৮১৮): সতীদাহ প্রথার অসারতা প্রসঙ্গে।

'বেদান্তসার' (১৮১৫), 'ভট্টাচার্যের সহিত বিচার' (১৮১৭)।

প্র. রাজা রামমোহন রায় কোন বিষয়ের বিরূদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন?

উ. ১৮২৩ সালে সংবাদপত্র বিধি (Press Ordinance) পাশ হলে তিনি এর বিরূদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। এর বিরূদ্ধে একটি প্রতিবাদ লিপি তিনি সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করেন এবং এর কপি ইংল্যান্ডের প্রিভি কাউন্সিলে প্রেরণ করেন।

বেদান্তগ্রন্থ   রাজা রামমোহন রায় 
বেদান্ত সার   
বেদান্ত চন্দ্রিকা  মৃত্যুঞ্জয় বিদ্যালঙ্কার

                                                                                               

প্র. সতীদাহ প্রথা কী? এ প্রথা বন্ধে কে ভূমিকা রাখেন?

উ. সতীদাহ অর্থ সহমরণ। স্বামীর সাথে একই চিতায় স্ত্রীকে দাহ করার রীতিই সতীদাহ প্রথা। সনাতন ধর্মে এ প্রথা বহুল প্রচলিত ছিল, যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। এ অমানবিক প্রথা বন্ধে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন এবং লেখনী ধারন করেন। সতীদাহ প্রথার অসারতা প্রসঙ্গে তিনি 'গোস্বামীর সহিত বিচার' (১৮১৮), 'প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ' (১৮১৮) সহ বিভিন্ন পুস্তক রচনা করে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। ৪ ডিসেম্বর, ১৮২৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় বৃটিশ সরকার সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেন। মোগল বাদশা দ্বিতীয় আকবর তাঁর দাবি-দাওয়া ব্রিটিশ সরকারের নিকট তুলে ধরার জন্য ১৮৩০ সালে রাজা রামমোহন রায়কে ব্রিটেনে পাঠান এবং এ উপলক্ষে সম্রাট তাকে 'রাজা' উপাধি প্রদান করেন।

Reference: অগ্রদূত বাংলা