মহাকবি কায়কোবাদ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বাঙালি মুসলমান কবি। বাংলা মহাকাব্যের অস্তোন্মুখ এবং গীতিকবিতার স্বর্ণযুগে তিনি মুসলমানদের গৌরবময় ইতিহাস থেকে কাহিনী নিয়ে ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্য রচনা করে দুঃসাহস দেখিয়েছেন, যা তাঁকে গৌরবময় আসনে অলংকৃত করে। তিনি বাংলা মহাকাব্য ধারার কবি হিসেবে খ্যাত।
প্র. কায়কোবাদের মহাকাব্যের নাম কী?
উ. ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪): এটি পানিপথের ৩য় যুদ্ধের কাহিনী (১৭৬১) অবলম্বনে রচিত।
প্র. ‘মহাশ্মশান’ মহাকাব্যের পরিচয় দাও।
উ. কায়কোবাদের শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য ‘মহাশ্মশান’ (১৯০৪)। [অধিকাংশ বইয়ে ‘মহাশ্মশান’ এর প্রকাশসাল দেওয়া হয়েছে ১৯০৫, কিন্তু এটি হবে ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দ। সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান]। মোহাম্মদ রওশন আলী সম্পাদিত ‘কোহিনূর’ পত্রিকায় মহাকাব্যটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। এটি পানিপথের ৩য় যুদ্ধের কাহিনী (১৭৬১) অবলম্বনে রচিত। এ মহাকাব্য ৮৭০ পৃষ্ঠায় তিন খণ্ডে মোট ৬০টি সর্গে বিভক্ত। পানিপথের এ যুদ্ধে মারাঠাদের সাথে রোহিলা-অধিপতি নজিব-উদ্-দৌলা’র শক্তি পরীক্ষা হয়। কবির দৃষ্টিতে এটি উভয়ের শক্তিক্ষয় ও ধ্বংস, এজন্য তিনি একে ‘মহাশ্মশান’ বলেছেন। এ কাব্যে ঐতিহাসিক-অনৈতিহাসিক দুই ধরনের চরিত্রের সমাবেশ ঘটেছে। প্রশিক্ষিত মুসলিম যোদ্ধা ইব্রাহীম কার্দি মুসলিম শিবিরে চাকরি না পেয়ে মারাঠা কর্তৃক চাকরি পায় এবং সমাদৃত হয়। যুদ্ধ শুরু হলে ইব্রাহীম কার্দির স্ত্রী জোহরা মনুবেগ ছদ্মনাম ধারণ করে এসে স্বামীকে মুসলিম শিবিরে ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করে। ইব্রাহীম কার্দি বিশ্বাসঘাতকতা না করে মারাঠাদের জন্য যুদ্ধে জীবন দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। নায়ক ইব্রাহীম কার্দির মৃত্যু কাব্যটিকে ট্র্যাজিক করে তোলে। মুনীর চৌধুরীর ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নাটকের কাহিনীও পানিপথের ৩য় যুদ্ধ। উল্লেখযোগ্য চরিত্র: ইব্রাহীম কার্দি, জোহরা।
প্র. কায়কোবাদের কাব্যগ্রন্থগুলোর নাম কী কী?
উ. ‘বিরহবিলাপ’ (১৮৭০): এটি কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ যা মাত্র বার বছর বয়সে রচনা করেন এবং তের বছর বয়সে প্রকাশিত হয়।
‘অশ্রুমালা’ (১৮৯৫): এটি গীতিকাব্য।
‘মহরম শরীফ’ (১৯৩২): এটি মহাকাব্যোচিত বড় আকারের একটি কাহিনীকাব্য।
‘কুসুমকানন’ (১৮৭৩), ‘শিবমন্দির’ (১৯২১), ‘অমিয়ধারা’ (১৯২৩), ‘শ্মশানভস্ম’ (১৯৩৮)।
কায়কোবাদের বিখ্যাত কবিতা ‘আযান’।
প্র. কবির মৃত্যুর পর প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ কী কী?
উ. ‘প্রেমের ফুল’ (১৯৭০), ‘প্রেমের বাণী’ (১৯৭০), ‘প্রেম পারিজাত’ (১৯৭০), ‘মন্দাকিনী ধারা (১৯৭১), ‘গওস পাকের প্রেমের কুঞ্জ’ (১৯৭৯)।
প্র. ‘অশ্রুমালা’ কাব্য সম্পর্কে লিখ। (৩২/২৫তম বিসিএস লিখিত)
উ. আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম মুসলিম কবি কায়কোবাদ রচিত বিখ্যাত গীতিকাব্য ‘অশ্রুমালা’ (১৮৯৫)। এ কাব্যগ্রন্থের মূল সুর প্রেম ও প্রকৃতির প্রতি আকর্ষণবোধ। ‘শ্মশান সঙ্গীত’, ‘সিরাজ সমাধি’, ‘মোসলেম শ্মশান’ প্রভৃতি কবিতায় কবি মুসলমানদের প্রাচীন সমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের কথা স্মরণ করেছেন ব্যথিত হৃদয়ে। ‘নীরব রোদন’, ‘উদাসীন প্রেমিক’ প্রভৃতি কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে মানব মনের আবেগ, আনন্দ-বিরহ, প্রেম-বেদনা ইত্যাদির স্বাভাবিক প্রকাশ। যেমন-
‘ইচ্ছে হয় তারে নিয়ে/বনবাসী হই
চাইলে এ লোকালয়/এ যে বড় বিষময়’।