সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী যৌবনকালে অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতেন এবং কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ধর্মীয় চেতনায় প্রভাবিত হয়ে মুসলিম পুনর্জাগরণবাদী হিসেবে পরিচিত হন। তাঁর রচিত গদ্য ছিল সংস্কৃতবহুল এবং কবিতা ক্লাসিক রীতির।
প্র. ইসমাইল হোসেনের কাব্যগ্রন্থসমূহ কী কী?
উ. 'অনল প্রবাহ' (১৯০০): এটি তাঁর প্রথম রচনা যা সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত হয় এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারের অভিযোগে তার ২ বছরের (১৯১০-১২) কারাদণ্ড হয়।
স্পেন বিজয় কাব্য' (১৯১৪): এটি স্পেনের সম্রাট রডরিকের সাথে মুসলিম বীর তারেকের সংগ্রাম কাহিনী নিয়ে রচিত মহাকাব্য। এ কাব্যের মাধ্যমে মুসলিমদের অতীত বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস নতুন করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
'আকাঙ্ক্ষা' (১৯০৬), 'উদ্বোধন' (১৯০৭), 'উচ্ছ্বাস' (১৯০৭), 'নব উদ্দীপনা' (১৯০৭)।
প্র. ইসমাইল হোসেনের উপন্যাসসমূহ কী কী?
উ. 'রায়নন্দিনী' (১৯১৮): বঙ্কিমচন্দ্রের 'দুর্গেশনন্দিনী' উপন্যাসের নায়ক হিন্দু এবং নায়িকা মুসলমান। দুই ধর্মের অবৈধ সম্পর্কের রচনার কারণে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে রচনা করেন 'রায়নন্দিনী'। এর নায়ক মুসলিম এবং নায়িকা হিন্দু। এ উপন্যাসে তিনি দেখান যে, হিন্দু নায়িকা কেদার রায়ের কন্যা স্বর্ণময়ী মুসলিম নায়ক ঈশা খাঁর প্রেমেই পড়েনি, বরং ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়েও করেছেন। 'রায়নন্দিনী' উপন্যাস হিসেবে সফল না হলেও প্রতিক্রিয়া হিসেবে সফল।
'তারা-বাঈ' (১৯১৮), 'ফিরোজা বেগম' (১৯২৩), 'নূরউদ্দিন' (১৯২৩), 'জাহানারা' (১৯৩১)।
প্র. ইসমাইল হোসেনের অন্যান্য রচনাবলি কী কী?
উ. প্রবন্ধ: 'স্বজাতি প্রেম' (১৯০৯), 'তুর্কি নারী জীবন' (১৯১৩), 'মহানগরী কর্ডোভা' (১৯১৩), 'আদব কায়দা শিক্ষা' (১৯১৪), 'স্পেনীয় মুসলমান সভ্যতা' (১৯১৬), 'সুচিন্তা' (১৯১৬)।
ভ্রমণকাহিনী: 'তুরস্ক ভ্রমণ' (১৯১০)।
সঙ্গীত গ্রন্থ: 'সঙ্গীত সঞ্জীবনী' (১৯১৬), 'প্রেমাঞ্জলি' (১৯১৬), এটি রবীন্দ্রনাথের 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের প্রতিযোগী হিসেবে রচিত সঙ্গীত গ্রন্থ।
প্র. 'অনল প্রবাহ' কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।
উ. সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী রচিত মুসলিম জাগরণমূলক মহাকাব্য জাতীয় রচনা 'অনল প্রবাহ' (১৯০০)। এ কাব্যে 'যা চলে গেছে তার জন্য শোক বৃথা বরং জাতির হৃতগৌরব উদ্ধারের প্রচেষ্টাই মুখ্য' এই বাণীর মাধ্যমে মুসলমানদের দুরবস্থা ও অধঃপতন ব্যক্ত করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও রোষ প্রকাশ করেছেন। কাব্যগ্রন্থটিতে ইংরেজ বিরোধী মনোভাব তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে 1 বলে ব্রিটিশ সরকার ১৯০৯ সালে বইটি বাজেয়াপ্ত করেন এবং সিরাজীকে দুই বছর (১৯১০-১২) কারাদণ্ড প্রদান করেন। কারাদণ্ড ভোগের অভিজ্ঞতা নিয়ে লেখা 'কারা কাহিনী' পরবর্তীতে মাসিক 'সাধনা' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।