আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯)

আবুল মনসুর আহমদ ছিলেন সাহিত্যিক ও সফল সাংবাদিক।  তিনি সে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ দলের অন্যতম কর্মী ছিলেন। নেতাজী সুভাসচন্দ্র বসুর কংগ্রেসের আন্দোলনে যোগ দেন। পাকিস্তান সরকার বেতার ও টিভিতে রবীন্দ্রসংগীতকে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী বলে প্রচার করলে  সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন দান করেন। বিরাজমান অন্যায় অত্যাচারের চিত্র তিনি ব্যঙ্গরসাত্মক ভাষার মাধ্যমে উপস্থাপন করেন। তাঁর ব্যঙ্গধর্মী রচনায় সমাজের মুখোশধারী মানুষের অন্তরের রূপ সার্থকভাবে উন্মোচিত হয়েছে।

 

  • আবুল মনসুর আহমদ ৩ সেপ্টেম্বর, ১৮৯৮ সালে ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেলার ধানিখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
  • তিনি ইংরেজি দৈনিক The Daily Star পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের পিতা এবং 'A Golden Age' এর লেখিকা তাহমিমা আনামের দাদা।
  • তিনি 'দৈনিক কৃষক' (১৯৩৮) ও 'দৈনিক ইত্তেহাদ' (১৯৪৬) পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন এবং 'ছোলতান' (১৯২৩) ও 'মোহাম্মদী' (১৯২৩) পত্রিকার সহকারী সম্পাদক ছিলেন।
  • তিনি আওয়ামী মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি (১৯৫৩-৫৮), যুক্তফ্রন্টের ২১ দফার প্রণেতা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী (১৯৫৪) ছিলেন। ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের মন্ত্রিসভায় শিক্ষামন্ত্রী ও ১৯৫৬-৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন।
  • বিদ্রূপাত্মক রচনার জন্য তিনি বিখ্যাত।
  • তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬০) পান।
  • তিনি ১৮ মার্চ, ১৯৭৯ সালে ঢাকায় মারা যান।

 

প্র. আবুল মনসুর আহমদের উপন্যাসসমূহ কী কী?

উ. 'সত্যমিথ্যা' (১৯৫৩): এটি Johan Bojer-এর 'The Power of a lie' গ্রন্থের বাংলা অনুবাদ।

'জীবনক্ষুধা' (১৯৫৫): বিশ শতকের পঞ্চাশের দশকের শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান মধ্যবিত্তের আত্মপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ও লালিত আদর্শের সাথে বাস্তবতার যে দ্বন্দ্ব, তারই প্রতিফলন এ উপন্যাস। এ উপন্যাসের নায়ক হালিম মুসলিম মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি।

'আবে হায়াত' (১৯৬৮): গ্রামের পির পরিবারের সন্তান হামিদ ডাক্তার হিসেবে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। মুখে সে জনদরদী হলেও প্রকৃতপক্ষে সে অর্থলিন্দু। বাইরে বিজ্ঞানমনস্ক হলেও ভিতরে সে আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী। প্রাক্তন বিবাহিত সহপাঠী রাজিয়াকে বিয়ে করার জন্য সে বিজ্ঞানের খোলস ছেড়ে আধ্যাত্মিকতার পথ বেছে নেয়, এখানেই তাঁর মুখোশ উম্মোচিত হয়। এ সব নিয়েই রচিত 'আবে-হায়াত'।

প্র. আবুল মনসুর আহমদের গল্পগ্রন্থসমূহ কী কী?

উ. 'আয়না' (১৯৩৫): এটির ভূমিকা লেখেন কাজী নজরুল ইসলাম। মুখবন্ধে নজরুল লেখেন, 'যে সমস্ত মানুষ হরেক রকমের মুখোশ পরে আমাদের সমাজে অবাধে বিচরণ করছে, আবুল মনসুরের আয়নার ভেতরে তাদের স্বরূপ-মূর্তি বন্য ভীষণতা নিয়ে ফুটে উঠেছে।' হুজুরে কেবলা, গো- দেওতা-কা দেশ, নায়েবে নবী, লীডরে কওম, মুজাহেদীন, বিদ্রোহী সংঘ, ধর্মরাজ্য- এই সাতটি গল্প নিয়ে রচিত 'আয়না' গল্পগ্রন্থ। আবুল মনসুর আহমদের 'বিদ্রোহী সংঘ' ব্যতীত অন্যান্য সব গল্পে ধর্মান্ধ ও ধর্মব্যবসায়ীদের স্বরূপ তুলে ধরেছেন।

'ফুড কনফারেন্স' (১৯৪৪): ১৩৫০ সালের দুর্ভিক্ষের করুণ চিত্র এতে প্রতিফলিত।

'আসমানী পর্দা' (১৯৬৪)।

প্র. আবুল মনসুর আহমদের অন্যান্য গ্রন্থসমূহ কী কী?

উ. শিশু সাহিত্য: 'গালিভারের সফরনামা' (১৯৫৯): এটি শিশু বিষয়ক সাহিত্য। এটি Jonathan Swift এর Guliver's Travels অবলম্বনে রচিত।

'মুসলমানী কথা' (১৯২৪): ইসলামের নবী-রাসুলদের কাহিনীভিত্তিক কিশোর গ্রন্থ।

• ছোটদের কাসাসুল আম্বিয়া' (১৯৪৯)।

আত্মজীবনী: 'আত্মকথা' (১৯৭৮)

প্রবন্ধ: 'পাক-বাংলার কালচার' (১৯৬৬), 'বেশি দামে কেনা, কম দামে বেচা আমাদের স্বাধীনতা' (১৯৮২)।

রাজনীতি বিষয়ক গ্রন্থ:

'আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর' (১৯৬৯), 'শেরে বাংলা থেকে বঙ্গবন্ধু' (১৯৭২)।

  • জীবনক্ষুধা (উপন্যাস) = আবুল মনসুর আহমদ
  • মৃত্যুক্ষুধা (উপন্যাস) = কাজী নজরুল ইসলাম

প্র. 'আয়না' গল্পগ্রন্থের পরিচয় দাও।

উ. ধর্মান্ধ ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের মুখোশ উম্মোচনের লক্ষ্যে আবুল মনসুর আহমদ রচনা করেন 'আয়না' (১৯৩৫) গল্পগ্রন্থ। এ গ্রন্থের মুখবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, 'যে-সমস্ত মানুষ হরেক রকমের মুখোশ পরে আমাদের সমাজে অবাধ বিচরণ করছে, আবুল মনসুরের আয়নার ভেতরে তাদের স্বরূপ-মূর্তি বন্য ভীষণতা নিয়ে ফুটে উঠেছে'। হুজুরে কেবলা, গো দেওতা-কা দেশ, নায়েবে নবী, লীডরে কওম, মুজাহেদীন, বিদ্রোহী সংঘ, ধর্মরাজ্য এ সাতটি গল্প নিয়ে 'আয়না' গল্পগ্রন্থ রচিত।

Reference: অগ্রদূত বাংলা