বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে আমৃত্যু সকল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার ও প্রতিবাদী। এ জন্য তাঁকে বাংলা সাহিত্যের 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয়। আবার একই সাথে কোমল দরদি মন নিয়ে ব্যথিত ও বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি। এক হাতে বাঁশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন, আর এসেই প্রচলিত শিল্পধারাসমূহকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও নতুন শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে করেছেন সমৃদ্ধতর।
প্র. নজরুল কত সালে ও কোথা থেকে প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন?
উ. গ্রামের মক্তব থেকে ১৯০৯ সালে।
প্র. তিনি কোন সময়ে লেটো গানের দলে থাকেন?
উ. ১৯০৯-১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে। নজরুলের চাচা কাজী বজলে করিম লেটো গানের দলের ওস্তাদ ছিলেন। এ গানের দলে তিনি পালা গান রচনা করতেন। নজরুলের লেটোগানে পারদর্শিতা দেখে সে সময়কার লেটোদলের বিখ্যাত কবিয়াল শেখ চাকার তাঁকে 'ব্যাঙাচি' বলে ডাকতেন। (পরবর্তীতে ১০ সালের শেষে রুটির দোকানে কাজ নেন)।
প্র. লেটো কী?
উ. বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল।
প্র. তিনি কত সালে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি হন?
উ. ১৯১৪ সালে আসানসোলে রুটির দোকানে কাজ করার সময় তাঁর গান শুনে মুগ্ধ হয়ে আসানসোল থানার দারোগা কাজী রফিজউদ্দিন ময়মনসিংহের ত্রিশাল বাজারের নিকটবর্তী কাজী সিমলা গ্রামের দরিরামপুর স্কুলে ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করান।
প্র. নজরুল কত সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন?
উ. ১৯১৭ সালে শিয়ারশোল স্কুলে ১০ম শ্রেণির প্রি-টেস্ট দিয়ে সেনাবাহিনীর সৈনিক পদে ৪৯ নম্বর বাঙালি পল্টনে যোগ দিয়ে করাচি যান এবং ১৯২০ এর শুরুতে বাঙালি রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হলে তিনি করাচি ত্যাগ করে কলকাতায় এসে ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটের 1 'বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি'র অফিসে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
প্র. নজরুলের দাম্পত্য জীবন সম্পর্কে লিখ?
উ. ১৮ জুন, ১৯২১ সালে কুমিল্লার দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বোনের মেয়ে সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিসের সাথে কবির বিবাহ সম্পন্ন হয়। কিন্তু কাবিনের শর্তে আলী আকবর খান নজরুলকে ঘরজামাই থাকার শর্ত জুড়ে দেন যা তিনি কোনোভাবেই মানতে না পেরে বাসর রাতেই দৌলতপুর ছেড়ে চলে যান। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ১৯৩৭ সালে তিনি নার্গিসকে একটি চিঠি লেখেন।
নজরুল কুমিল্লার কান্দিরপাড়ে গিয়ে ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের বাড়িতে থাকতেন। ইন্দ্রকুমার সেনগুপ্তের ভ্রাতুষ্পুত্রী, গিরিবালা দেবীর (বিরজাসুন্দরীর জা) কন্যা আশালতার সাথে নজরুলের প্রণয় জন্মে। ২৪ এপ্রিল, ১৯২৪ সালে।সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান। নজরুল আশালতা সেনগুপ্তাকে বিয়ে করেন। আশালতার ডাক নাম ছিল দুলি, তাই তাকে আদর করে দোলন বা দুলু নামে ডাকা হতো। বিয়ের পর নজরুল নাম রাখেন প্রমীলা।
কাজী নজরুল ইসলামের পুত্র কৃষ্ণ মোহম্মদ ও অরিন্দম খালেদ বুলবুলের অকাল প্রয়াণের পর কাজী সব্যসাচী (১৯২৯-১৯৭৯) ও কাজী অনিরুদ্ধ (১৯৩১-১৯৭৪) বেঁচে ছিলেন। কাজী সব্যসাচী ছিলেন আবৃত্তিকার এবং তাঁর কন্যার নাম খিলখিল কাজী। কাজী অনিরুদ্ধ ছিলেন সুরকার এবং তাঁর কন্যার নাম অনিন্দিতা কাজী।
প্র. নজরুল কোন দৈনিক পত্রিকার যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন?
উ. সান্ধ্য পত্রিকা 'নবযুগ' (১২ জুলাই, ১৯২০)। এ পত্রিকায় নজরুলের সাথে যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন কমরেড মুজাফফর আহমদ। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন এ.কে ফজলুল হক। ১৯৪২ সালে 'দৈনিক নবযুগ' পত্রিকা প্রকাশিত হলে কাজী নজরুল ইসলাম এর সম্পাদক নিযুক্ত হন।
প্র. তিনি কোন কোন পত্রিকা সম্পাদনা করতেন?
উ. অর্ধ-সাপ্তাহিক পত্রিকা 'ধূমকেতু' (১৯২২); 'লাঙ্গল' (১৯২৫)।
প্র. 'ধূমকেতু' পত্রিকা সম্পর্কে আলোচনা করুন?
উ. কাজী নজরুল ইসলামের সম্পাদনায় ১৯২২ সালে অর্ধ- সাপ্তাহিক পত্রিকা 'ধূমকেতু' প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির প্রকাশনা উপলক্ষ্যে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন "কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েঘু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু। আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।" এ মন্তব্যটি পত্রিকার পাতার শীর্ষে লেখা থাকতো। নজরুল এ পত্রিকায় দেশের মুক্তির দিশারী হিসেবে 'অনুশীলন' ও 'যুগান্তর' দলের সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনকে উৎসাহ প্রদান ও ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা দাবি করে বহু অগ্নিঝরা সম্পাদকীয়, কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতাটি প্রকাশিত হলে ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২৩ নভেম্বর, ১৯২২ সালে 'যুগবাণী' প্রবন্ধগ্রন্থ নিষিদ্ধ হলে নজরুল গ্রেফতার হন এবং ১৬ জানুয়ারি, ১৯২৩ সালে এক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। ফলে নজরুলের অনুপস্থিতিতে বীরেন সেনগুপ্ত ও অমরেশ কাঞ্জিলালের সম্পাদনায় কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হলেও মার্চ, ১৯২৩ সালে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।