সুফিয়া কামাল (১৯১১ - ১৯৯৯)

বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত কবি, লেখিকা, সমাজসেবক, নারীবাদী ও নারী আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ সুফিয়া কামাল। তাঁর কবিতার বিষয় প্রেম, প্রকৃতি, ব্যক্তিগত অনুভূতি, বেদনাময় স্মৃতি, জাতীয় উৎসবাদি, স্বদেশানুরাগ, ধর্মানুভূতি এবং মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির ওপর দমননীতির অংশ হিসেবে রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ করলে তিনি তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। 

 

  • সুফিয়া কামাল ২০ জুন, ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালের শায়েস্তাবাদের রাহাত মঞ্জিলে জন্মগ্রহণ করেন। 
  • পৈতৃক নিবাস- কুমিল্লা। 
  • তিনি 'মহিলা পরিষদ' (১৯৭০) এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। বর্তমানে এর নাম 'বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ'। 
  • তিনি 'বেগম' (১৯৪৭) পত্রিকার প্রথম সম্পাদক ছিলেন। 
  • বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক মহিলা কবি সুফিয়া কামাল। তিনি 'জননী সাহসিকা' নামে পরিচিত। 
  • তিনি ছিলেন রবীন্দ্র কাব্যধারার গীতিকবিতা রচয়িতা। 
  • তিনি শিশুদের সংগঠন 'কচিকাঁচার মেলা' (১৯৫৬) প্রতিষ্ঠা করেন। 
  • তিনি 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার' (১৯৬২), 'একুশে পদক' (১৯৭৬), 'বেগম রোকেয়া পদক' (১৯৯২), 'স্বাধীনতা পুরস্কার' (১৯৯৭) পান। 
  • বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে 'বেগম সুফিয়া কামাল হল'। 
  • সুফিয়া কামাল ১৯১৮ সালে কলকাতায় রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর একান্ত প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'রোকেয়া হল' এর নামকরণ করা হয়। 
  • তিনি ২০ নভেম্বর, ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে মারা যান। বাংলাদেশে তিনিই প্রথম নারী যাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়।
  • মাত্র বার বছর বয়সে মামাতো ভাই সৈয়দ নেহাল হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। তখন নাম হয় সুফিয়া এন হোসেন। ১৯৩২ সালে নেহাল হোসেন যক্ষ্মা রোগে মারা গেলে ১৯৩৯ সালে তিনি চট্টগ্রামের লেখক কামালউদ্দিন আহমদকে বিয়ে করেন। তখন থেকে সুফিয়া কামাল নাম ব্যবহার করেন। এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল তাঁর মেয়ে।

 

প্র. সুফিয়া কামাল রচিত প্রথম সাহিত্যকর্মের নাম কী?

উ. ‘সৈনিক বধূ’ (১৯২৩): এটি তাঁর প্রথম গল্প যা বরিশালের ‘তরুণ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। 

বাসন্তী’ (১৯২৬): এটি তাঁর প্রথম কবিতা যা ‘সওগাত’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

প্র. তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলো কী কী?

উ. ‘সাঁঝের মায়া’ (১৯৩৮): এটি তাঁর রচিত প্রথম কাব্য। এর মুখবন্ধ লিখে দেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯৮৪ সালে এটি রুশ ভাষায় সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে প্রকাশিত হয়। 

‘মোর জাদুদের সমাধি পরে’ (১৯৭২): এ কাব্যের কবিতাগুলো মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে লেখা। ‘মায়া কাজল’ (১৯৫১), ‘মন ও জীবন’ (১৯৫৭), ‘শান্তি ও প্রার্থনা’ (১৯৫৮), ‘উদাত্ত পৃথিবী’ (১৯৬৪), ‘দিওয়ান’ (১৯৬৬), ‘অভিযাত্রিক’ (১৯৬৯), ‘মৃত্তিকার ঘ্রাণ’ (১৯৭০)।

  • অভিযাত্রিক (কাব্য) = সুফিয়া কামাল 
  • অভিযাত্রিক (উপন্যাস) = বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

প্র. তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য রচনাবলি কী কী?

গল্প: ‘কেয়ার কাঁটা’ (১৯৩৭)। 

ভ্রমণকাহিনী: ‘সোভিয়েতের দিনগুলো’ (১৯৬৮)। 

আত্মজীবনী: ‘একালে আমাদের কাল’ (১৯৮৮)। 

শিশুতোষ গ্রন্থ: ‘ইতল বিতল’ (১৯৬৫), ‘নওল কিশোরের দরবারে’ (১৯৮২)। 

স্মৃতিকথা: ‘একাত্তরের ডায়েরি’ (১৯৮৯)।

কবিতা: ‘তাহারেই পড়ে মনে’ ( সাঁঝের মায়া ), ‘রুপসী বাংলা’ ( সাঁঝের মায়া) 

 

বিখ্যাত পঙক্তিঃ

  • জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে / মরি যেন এই দেশে । ( জন্মেছি এই দেশে )
Reference: অগ্রদূত বাংলা