প্রখ্যাত কবি, সংগীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক সিকান্দার আবু জাফর 'সমকাল' পত্রিকার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, তিনি ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৬৭ সালের জুন মাসে রবীন্দ্রসংগীত পাকিস্তানের আদর্শের পরিপন্থী- এই বক্তব্য উপস্থাপন করে পাকিস্তান সরকার রেডিও ও টেলিভিশন থেকে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে তিনি এর বিরোধিতা করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাসম্পন্ন অনেক গান রচনা করেন যা জনগণকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাঁর কবিতায় যুগযন্ত্রণা বলিষ্ঠভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
প্র. তিনি কোন কোন পত্রিকার সাথে যুক্ত ছিলেন?
উ. 'মাসিক সমকাল' (১৯৫৭)- প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, 'দৈনিক ইত্তেফাক' (১৯৫৩)- সহযোগী সম্পাদক, 'দৈনিক মিল্লাত' (১৯৫৪)- প্রধান সম্পাদক।
প্র. 'সমকাল' পত্রিকা সম্পর্কে কি জান? ২১/১১তম বিসিএস লিখিত।
উ. ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সিকানদার আবু জাফর সম্পাদিত 'সমকাল' সমকালীন সময়ের প্রভাবশালী পত্রিকা। তৎকালীন পাকিস্তানে, বর্তমান বাংলাদেশের আধুনিক সাহিত্যের বীজতলা নির্মাণে 'সমকাল' পত্রিকার ভূমিকা অপরিসীম। ষাটের দশকের সকল সাহিত্যিক এ পত্রিকায় লিখতেন। এ পত্রিকার হাত ধরেই অনেক সাহিত্যিক খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন বা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছেন।
প্র. তাঁর সাহিত্যকর্মসমূহ কী কী?
কাব্যগ্রন্থ: 'প্রসন্ন প্রহর' (১৯৬৫), 'বৈরীবৃষ্টিতে' (১৯৬৫), 'তিমিরান্তক' (১৯৬৫), 'কবিতা' (১৯৬৮), 'বৃশ্চিক লগ্ন' (১৯৭১)।
উপন্যাস: 'মাটি আর অশ্রু' (১৯৪২), 'পূরবী' (১৯৪৪), 'নতুন সকাল' (১৯৪৫)।
কিশোর উপন্যাস: 'জয়ের পথে' (১৯৪২), 'নবী কাহিনী' (জীবনী-১৯৫১)।
গল্পগ্রন্থ: 'মতি আর অশ্রু' (১৯৪১)।
রূপক নাটক: 'শকুন্ত উপাখ্যান' (১৯৫৮)।
ঐতিহাসিক নাটক: 'সিরাজউদ্দৌলা' (১৯৬৫)।
জীবনী নাটক: 'মহাকবি আলাওল' (১৯৬৫)।
গানের সংকলন: 'মালব কৌশিক' (১৯৬৯)।
অনুবাদ: 'রুবাইয়াৎ ওমর খৈয়াম' (১৯৬৬), 'সিংয়ের নাটক' (১৯৭১)।
বিখ্যাত গান: 'আমাদের সংগ্রাম চলবেই, জনতার সংগ্রাম চলবেই'।
প্র. 'সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের পরিচয় দাও।
উ. সিকান্দার আবু জাফরের শ্রেষ্ঠ কীর্তি বিখ্যাত ঐতিহাসিক নাটক 'সিরাজউদ্দৌলা' (১৯৬৫)। নাটকটি ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে রচিত হয় এবং ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে ইসমাইল মোহাম্মদের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়। নাটকটি বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ (পৌষ, ১৩৭২) সালে। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন, পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে ইংরেজদের যুদ্ধে মীরজাফর গংদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সিরাজের পরাজয় ঘটে এবং বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্ত যায়। সিরাজ পুনরায় শক্তি সঞ্চয় করার লক্ষ্যে পার্টনার দিকে অগ্রসর হলে ধরা পড়ে জেলে নিক্ষিপ্ত হন। মীরজাফরের পুত্র মিরনের নির্দেশে মোহাম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করেন। ফলে ক্ষমতায় আরোহণ করেন মীরজাফর। বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার ক্ষমতা চলে গেল ইংরেজদের হাতে, মীরজাফর থাকলেন নামমাত্র প্রধান। সংবেদনশীল কবি ও নাট্যকার সিকানদার আবু জাফর এ পটভূমিকে ব্যবহার করে রচনা করেন 'সিরাজউদ্দৌলা'। চরিত্র: সিরাজ, মীরজাফর, আলিবর্দি, ক্লাইভ, ঘসেটি বেগম, আমিনা বেগম প্রমুখ।