গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

প্র. নজরুলের কতটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ হয় ও কী কী?/২৪/২২তম বিসিএস [লিখিত]

উ. সাহিত্য সমালোচক শিশির কর 'নিষিদ্ধ নজরুল' নামক গ্রন্থে ৫টি গ্রন্থের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা: 'যুগবাণী' (নিষিদ্ধ- ২৩ নভেম্বর, ১৯২২। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার: ১৯৪৭), 'বিষের বাঁশি' (নিষিদ্ধ- ২২ অক্টোবর, ১৯২৪। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার- ২৭ এপ্রিল, ১৯৪৫), 'ভাঙার গান' (নিষিদ্ধ- ১১ নভেম্বর, ১৯২৪), 'প্রলয়শিখা' (নিষিদ্ধ- ১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৩০), 'চন্দ্রবিন্দু' (নিষিদ্ধ- ১৪ অক্টোবর, ১৯৩১)।

*** গ্রন্থ হিসেবে 'অগ্নিবীণা' কাব্যটি কখনো নিষিদ্ধ হয়নি। এ কাব্যের 'রক্তাম্বরধারিণী মা' কবিতাটি নিষিদ্ধ হয়। 'ধূমকেতু' পত্রিকার পূজা (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২) সংখ্যায় রাজনৈতিক কবিতা 'আনন্দময়ীর আগমনে' প্রকাশিত হলে পত্রিকার এ সংখ্যা নিষিদ্ধ হয় এবং নজরুল ইসলাম গ্রেফতার হন। এ কবিতা রচনার জন্য কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে (ব্রিটিশ সরকার) রাজদ্রোহের অভিযোগে ১৬ জানুয়ারি, ১৯২৩ সালে কবিকে ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন।

প্র. নজরুল রচিত কাব্যগ্রন্থগুলো সম্পর্কে কি জানো? ২১তম বিসিএস লিখিত।

উ. কাজী নজরুল ইসলামের মোট কাব্য সংখ্যা ২২টি।

'দোলনচাঁপা' (অক্টোবর, ১৯২৩): কাজী নজরুল ইসলাম রাজবন্দি থাকা অবস্থায় কাব্যটি প্রকাশিত হয়। এটি প্রেমের কাব্য। তাঁর স্ত্রী দুলির নামানুসারে এ কাব্যের নামকরণ করেন। এ কাব্যের প্রথম কবিতা 'আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে'। বেলাশেষে, পূবের হাওয়া, চোখের চাতক, অবেলার ডাক, পূজারিণী ইত্যাদি এ কাব্যের অন্যতম কবিতা।

'বিষের বাঁশি' (আগস্ট, ১৯২৪): ২২ অক্টোবর, ১৯২৪ সালে গ্রন্থটি নিষিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল ২৭ এপ্রিল, ১৯৪৫ সালে। এটি তিনি উৎসর্গ করেন এদেশের নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রনায়িকা মিসেস এম. রহমানকে (মোসাম্মদ মাসুদা খাতুন)।

'ভাঙার গান' (আগস্ট, ১৯২৪)। এটি মেদিনীপুরবাসীর উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন।

'ছায়ানট' (১৯২৪): এটি উৎসর্গ করেন মুজাফ্ফর আহমদ ও কুতুবউদ্দীন আহমদকে।

'চিত্তনামা' (১৯২৫): দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ। ১৯২৫ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ দার্জিলিং-এ মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকার্ত কবি অর্ঘ্য, অকাল- সন্ধ্যা, সান্ত্বনা, রাজভিখারি নামে কয়েকটি কবিতা লেখেন। 'ইন্দ্রপতন' কবিতায় কবি মহানবীর সাথে চিত্তরঞ্জনকে তুলনা করে কবিতা লেখেনঃ

"জন্মিলে তুমি মোহাম্মদের আগে হে পুরুষবর 

কোরানে ঘোষিত তোমার মহিমা হতে পয়গাম্বর।"

এ কবিতাটি প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথে মুসলিমরা কবির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এটির সংশোধিত রূপ প্রকাশ পায়। কাব্যটি উৎসর্গ করেন চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তী দেবীকে। বাসন্তী দেবীকে তিনি মা বলে ডাকতেন।

'ঝিঙেফুল' (১৯২৬): শিশুতোষ কাব্য। এটি উৎসর্গ করেন বীর বাদলকে।

'সাতভাই চম্পা' (১৯২৬): শিশুতোষ কাব্য।

'সর্বহারা' (১৯২৬): এ কাব্যের বিখ্যাত কবিতা 'কাণ্ডারী হুশিয়ার'। এটি উৎসর্গ করেন বিরজাসুন্দরী দেবীকে।

'সিন্ধু হিন্দোল' (১৯২৭): এ কাব্যের বিখ্যাত কবিতা 'দারিদ্র্য'। এটি উৎসর্গ করেন হাবীবুল্লাহ বাহার ও শামসুন্নাহার মাহমুদকে।

'সঞ্চিতা' (১৯২৮): বিভিন্ন কাব্যের বাছাইকৃত কবিতা সংকলন। এতে মোট ৭৮টি কবিতা ও ১৭টি গান সংকলিত হয়েছে। তিনি এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গ করেন এবং উৎসর্গপত্রে লিখেন: 'বিশ্বকবিসম্রাট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রীশ্রীচরণারবিন্দেযু'।

'চক্রবাক' (১৯২৯): চট্টগ্রামে অবস্থানকালে লেখা অধিকাংশ কবিতা এতে স্থান পায়। তিনি এটি উৎসর্গ করেন তৎকালীন ঢাকা ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমান- ঢাকা কলেজ) অধ্যক্ষ সুরেন্দ্রনাথ মৈত্রকে।

'সন্ধ্যা' (১৯২৯): এ কাব্যের অন্যতম কবিতা 'চল চল চল'। ১৯২৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে 'মুসলিম সাহিত্য সমাজ' এর দ্বিতীয় বার্ষিক সম্মেলনে যোগদানের জন্য নজরুল ঢাকায় আসেন। তখন তিনি সৈয়দ আবুল হেসেনের সরকারি বাসা বর্ধমান হাউসে (বর্তমান- বাংলা একাডেমি) অবস্থানকালে এ গানটি রচনা করেন। এটি প্রথম 'নতুনের গান' শিরোনামে 'শিখা' পত্রিকায় ১৯২৮ (বাংলা- ১৩৩৫) সালে প্রকাশিত হয়। এটি উৎসর্গ করেন মাদারীপুরের শান্তিসেনাদেরকে। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে এ কবিতার/গানের ২১ চরণ বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

'প্রলয়শিখা' (১৯৩০): এ কাব্যের জন্য কবি ৬ মাস কারাভোগ করেন।

'মরুভাস্কর' (১৯৫০): এটি হযরত মুহাম্মাদ (স) এর জীবনীভিত্তিক গ্রন্থ। এটি ৪টি সর্গে ১৮টি খণ্ড-কবিতা নিয়ে রচিত।

'শেষ সওগাত' (১৯৫৮): এ কাব্যের ভূমিকা লেখেন প্রেমেন্দ্র মিত্র।

'সাম্যবাদী' (ডিসেম্বর, ১৯২৫), 'ফণি-মনসা' (১৯২৭), 'জিঞ্জির' (১৯২৮), 'পূবের হাওয়া' (১৯২৫), 'নির্ঝর' (১৯৩৯), 'নতুন চাঁদ' (১৯৩৯)।

  • ছায়ানট (কাব্যগ্রন্থ) = কাজী নজরুল ইসলাম
  • ছায়াময়ী (কাব্যগ্রন্থ) = হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

প্র. 'অগ্নিবীণা' কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।

উ. বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ 'অগ্নিবীণা' (সেপ্টেম্বর, ১৯২২)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে মানবতার অবক্ষয় এবং ভারতের স্বাধিকার আন্দোলনের পটভূমিতে তিনি 'অগ্নিবীণা' কাব্য রচনা করেন। কাব্যটিতে ভারতীয় পুরাণ এবং পশ্চিম এশীয় উদারনৈতিক ঐতিহ্য ব্যবহার করেছেন দক্ষতার সাথে। এ কাব্যের অন্যতম কবিতা 'বিদ্রোহী'। এ কবিতার জন্যই তাকে 'বিদ্রোহী কবি' বলা হয়। 'প্রলয়োল্লাস' এ কাব্যের প্রথম কবিতা এবং শেষ কবিতা 'মোহররম'। 'বিদ্রোহী', 'রক্তাম্বরধারিণী মা', 'আগমনী', 'ধূমকেতু', 'কামাল পাশা', 'আনোয়ার', 'রণভেরী', 'সাত-ইল-আরব', 'খেয়াপারের তরণী', 'কোরবানী', 'মোহররম'- এ ১২টি কবিতার সমন্বয়ে 'অগ্নিবীণা' কাব্যটি কলকাতার আর্য পাবলিশিং হাউস থেকে প্রকাশিত হয়। কাব্যটির প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ পরিকল্পনায় ছিলেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। কবি এটি বিপ্লবী বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে উৎসর্গ করেন।

  • সঞ্চয়িতা (কাব্যগ্রন্থ) = রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • সঞ্চিতা (কাব্যগ্রন্থ) = কাজী নজরুল ইসলাম
  • সঞ্চয়ন (প্রবন্ধ) = কাজী মোতাহার হোসেন

প্র. 'সাম্যবাদী' কাব্যগ্রন্থের পরিচয় দাও।

উ. কাজী নজরুল ইসলামের অসাধারণ ও মানবতাবাদী কাব্যগ্রন্থ 'সাম্যবাদী' ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে প্রকাশিত হয়। 'সাম্যবাদী', 'ঈশ্বর', 'মানুষ', 'বারাঙ্গনা', 'কুলি-মজুর', 'নারী' ইত্যাদি কবিতার সমন্বয়ে রচিত এ কাব্য। কাব্যটিতে সমাজের অসাম্য, গরিবদের প্রতি নির্যাতন ও অবহেলা, ধর্ম প্রভৃতি বিষয় নিয়ে বিপ্লবাত্মক বক্তব্য তুলে ধরেছেন। এ কাব্যের বিখ্যাত উক্তি-

মানুষেরে ঘৃণা করি, 

ও কারা কোরান বেদ বাইবেল চুম্বিছে মরি মরি, 

ও মুখ হইতে কেতাব-গ্রন্থ নাও জোড় করে কেড়ে, 

যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে  

পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল- মূর্খরা সব শোনো 

মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো।

প্র. নজরুলের উপন্যাস কয়টি ও কী কী? ৩৮ তম বিসিএস লিখিত

উ. নজরুলের উপন্যাস ৩টি।

উ. 'বাঁধনহারা' (১৯২৭): এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস। ১৯২১ সাল থেকে এটি ধারাবাহিকভাবে 'মোসলেম ভারত' পত্রিকায় ছাপা হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এ উপন্যাসের কিছু অংশ ১৯২৭ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশের সময় বাদ পড়ে যায়। পরবর্তীতে তা খুঁজে পাওয়া গেলে ১৯ মে, ২০০৬ সালে দৈনিক 'প্রথম আলো' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের পত্র সংখ্যা ১৮টি। নুরুর সাথে মাহবুবার প্রণয় এবং বিয়ের উদ্যোগ অনেক এগিয়ে গেলে হঠাৎ নুরু পালিয়ে গিয়ে সৈনিক জীবন গ্রহণ করে। যদিও এর পেছনে দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালীন কোনো তাগিদ ছিল না। অনেকের মতে, এ উপন্যাসের নুরুই নজরুল। চরিত্র: নুরুল হুদা, মাহবুবা, সাহসিকা, রাবেয়া।

'মৃত্যুক্ষুধা' (১৯৩০): ত্রিশাল গ্রাম ও অসহযোগ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে এটি রচিত। এটি ১৯২৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে 'সওগাত' পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে। (সুত্র। বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান।

'কুহেলিকা' (১৯৩১): ১৯২৭ সাল থেকে 'নওরোজ' পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় এবং গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালে। এটি রাজনৈতিক উপন্যাস। কারণ, নায়ক জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে স্বদেশী আন্দোলনকে / সশস্ত্র বিপ্লবকে উপস্থাপন করা হয়েছে। এ উপন্যাসের বিখ্যাত উক্তি- 'নারী কুহেলিকা, ইহারা মায়াবিনীর জাত। ইহারা সকল কল্যাণের পথে মায়াজাল পাতিয়া রাখিয়াছে। ইহারা গহন-পথের কন্টক, রাজপথের দস্যু।'

প্র. 'মৃত্যুক্ষুধা' সম্পর্কে লিখ। ২৬তম বিসিএস লিখিত।

উ. ব্রিটিশ শাসিত ভারতবর্ষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, চল্লিশের দশকের ভঙ্গুর ও বিপর্যস্ত সময়কে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে তুলে ধরে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচনা করেন বিখ্যাত উপন্যাস 'মৃত্যুক্ষুধা' (১৯৩০)। কৃষ্ণনগরের চাঁদসড়কের দরিদ্র হিন্দু-মুসলিম-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের দারিদ্রদ্র্য ও দুঃখে ভরা জীবন নিয়ে উপন্যাসের কাহিনী গড়ে উঠেছে। উপন্যাসের অন্যতম চরিত্র গজালের মা চাঁদসড়কের বস্তিতে বাস করে। তার তিন ছেলে যৌবন বয়সে মারা যায়। মৃত ছেলেদের বিধবা স্ত্রী আর তাদের প্রায় এক ডজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে তার সংসার। ছোট ছেলে প্যাকালে রাজমিস্ত্রির কাজ করে সবার ভরণ-পোষণের চেষ্টা করে। উপন্যাসের প্রথম অংশে দেখা যায়, এসব অভাব-অনটনের মধ্যে খ্রিষ্টান কুর্শি ও প্যাঁকালে একে অপরকে প্রচণ্ড ভালোবাসে এবং ভালোবাসার জন্য প্যাঁকালে ধর্মান্তরিত হয়। উপন্যাসের দ্বিতীয় অংশে আমরা দেখতে পাই, আনসার ও রুবির প্রসঙ্গ। সমগ্র উপন্যাসের যোগসূত্র মেজো বউ। শেষে দেখা যায়, অভাবের তাড়নায় মেজো বউ খ্রিষ্টান হয় এবং বরিশালে নিজের জীবন কাটিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু সন্তানদের টানে তাকে বস্তিতে ফিরে আসতে হয়। অন্যদিকে প্যাকালেকে খাঁন বাহাদুর সাহেব কুড়ি টাকা বেতনের চাকরি দিলে সে কুর্শিকে নিয়ে মুসলমান হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এখানেই উপন্যাসের কাহিনীর পরিসমাপ্তি।

প্র. নজরুলের গল্পগ্রন্থগুলো কী কী?/২৩তম বিসিএস লিখিত

উ. 'ব্যথার দান' (ফেব্রুয়ারি, ১৯২২): এটি তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থ। এতে মোট ৬টি গল্প আছে- বাঘার দান, হেনা, অতৃপ্ত কামনা, বাদল-বরিষণে, ঘুমের ঘোরে, রাজবন্দীর চিঠি।

'রিক্তের বেদন' (১৯২৫): প্রতিটি গল্পই সমকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ গ্রন্থের গল্পসমূহ হলো: রিক্তের বেদন, বাউন্ডেলের আত্মকাহিনী, মেহের-নেগার, সাঁঝের তারা, রাক্ষুসী, সালেক, স্বামীহারা, দুরন্ত পথিক। গল্পগুলোর প্রধান বিষয় প্রেম।

'শিউলিমালা' (১৯৩১)। এ গ্রন্থের গল্পগুলো হলো: পদ্ম-গোখরা, জিনের বাদশা, অগ্নি-গিরি, শিউলিমালা।

প্র. নজরুলের নাট্যগ্রন্থগুলো কী কী?

উ. 'ঝিলিমিলি' (১৯৩০): এটি ঝিলিমিলি, সেতুবন্ধ ও শিল্পী নামের ৩টি নাটকের সংকলন এবং প্রথম নাট্যগ্রন্থ।

'আলেয়া' (গীতিনাট্য, ১৯৩১); 'পুতুলের বিয়ে' (কিশোর নাটক, ১৯৩৩); 'মধুমালা' (গীতিনাট্য, ১৯৫৯): 'ঝড়' (কিশোর কাব্যনাট্য, ১৯৬০)। 'পিলে পটকা পুতুলের বিয়ে' (কিশোর কাব্যনাট্য, ১৯৬৪)।

প্র. নজরুল রচিত প্রবন্ধগ্রন্থগুলো কী কী? ৪৪তম বিসিএস লিখিত

উ. 'রাজবন্দীর জবানবন্দী' (০৭/০১/১৯২৩)। এটি তিনি জেলে বসে লেখেন। 'ধূমকেতু' পত্রিকায় 'আনন্দময়ীর আগমনে' কবিতা প্রকাশিত হলে তা নিষিদ্ধ হয় এবং নজরুলকে গ্রেফতার করা হয়। হুগলী জেলে বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে নজরুল অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন শুরু করেন। এ অবস্থায় নজরুলকে রবীন্দ্রনাথ টেলিগ্রাম পাঠান- 'Give up hunger strike, our literature claims you', কিন্তু ঠিকানা না থাকায় জেল কর্তৃপক্ষ সে চিঠি রবীন্দ্রনাথের নিকট ফেরত পাঠায়। এ সময়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর 'বসন্ত' নাটকটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর অনুরোধে তিনি ৩৯ দিন পর অনশন ভঙ্গ করেন। জেলে থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষ তাঁর বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি তা মাত্র ৪ পৃষ্ঠায় লিখিতভাবে আদালতে উপস্থাপন করেন, এটাকেই বলা হয় 'রাজবন্দীর জবানবন্দী'। এ প্রবন্ধে তিনি নিজেকে 'বিদ্রোহী কবি' হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি লিখেছেন - "শুনেছি, আমার বিচারক একজন কবি। শুনে আনন্দিত হয়েছি। বিদ্রোহী কবির বিচার বিচারক কবির নিকট।" পরবর্তীতে তিনি জেল থেকে ১৫ অক্টোবর, ১৯২৩ সালে মুক্তি পান।

'যৌবনের গান': ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জে মুসলিম যুব সমাজ কাজী নজরুল ইসলামকে অভিনন্দন জানাতে গেলে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তারই পরিমার্জিত ও লিখিত রূপ 'যৌবনের গান'।

'যুগবাণী' (১৯২২), 'দুর্দিনের যাত্রী' (১৯২৬), 'রুদ্রমঙ্গল' (১৯২৭), 'ধূমকেতু' (১৯৬১)।

প্র. নজরুলের সংগীতগ্রন্থসমূহ কী কী? 

উ. 'বুলবুল' (১ম খণ্ড-১৯২৮, ২য় খণ্ড-১৯৫২), 'চোখের চাতক' (১৯২৯), 'সন্ধ্যা' (১৯২৯), 'নজরুল গীতিকা' (১৯৩০), 'নজরুল স্বরলিপি' (১৯৩১), 'চন্দ্রবিন্দু' (১৯৩১), 'সুরসাকী' (১৯৩১), 'বনগীতি' (১৯৩১), 'জুলফিকার' (১৯৩২), 'গুলবাগিচা' (১৯৩৩), 'গানের মালা' (১৯৩৪), 'নীতি শতদল' (১৯৩৪), 'স্বরলিপি' (১৯৩৪), 'সুর-মুকুর' (১৯৩৪), 'রাঙা জবা' (শ্যামা সংগীত, ১৯৬৬)।

  • মরুভাস্কর (প্রবন্ধ) - মো: ওয়াজেদ আলী 
  • মরুভাস্কর (কাব্যগ্রন্থ) - কাজী নজরুল ইসলাম 
  • মরুশিখা (কাব্যগ্রন্থ) - যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত 
  • মরুমায়া ((কাব্যগ্রন্থ) - যতীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত 
  • মরুসূর্য (কাব্যগ্রন্থ)  - অ.ন.ম. বজলুর রশিদ
  • মরুচন্দ্রিকা (কাব্যগ্রন্থ) - কাজী কাদের নেওয়াজ
  • মরুকুসুম (উপন্যাস) - শাহাদাৎ হোসেন
  • মরুদুলাল (গদ্যগ্রন্থ) - গোলাম মোস্তফা

প্র. নজরুলের অনুবাদ গ্রন্থের নাম কী? 

উ. 'রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম': ইরানের জীবনবাদী কবি ওমর খৈয়ামের কবিতা অনুবাদ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। ডিসেম্বর, ১৯৫৯ সালে গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। সৈয়দ মুজতবা আলী এর ভূমিকা লেখেন। 

'কাব্য আমপারা' (১৯৩৩): এ গ্রন্থে কাজী নজরুল ইসলাম পবিত্র কুরআন শরীফের ৩৮টি সুরার অনুবাদ করে তা ছন্দে ছন্দে সাজিয়েছেন।

'দিওয়ানে হাফিজ' (১৯৩০), 'মক্তব সাহিত্য' (১৯৩৫)।

প্র. নজরুল পরিচালিত চলচ্চিত্র কোনটি? 

উ.'ধূপছায়া' (১৯৩১)। নজরুল অভিনীত চলচ্চিত্র 'ধ্রুব'। কানাডায় নজরুলকে নিয়ে ফিলিপ স্পারেল 'নজরুল' নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। 

প্র. কোন কবিতা প্রকাশিত হলে নজরুল গ্রেফতার হন? 

উ.'আনন্দময়ীর আগমনে' (ধূমকেতুর পূজা সংখ্যায় ১৯২২ সালে)। 

প্র. বাংলাদেশের রণসংগীতের রচয়িতা কে? 

উ. কাজী নজরুল ইসলাম।

প্র. নজরুল কবে মস্তিষ্কের ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারান?

উ. ১০ অক্টোবর, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে। (মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে)।

প্র. নজরুলকে কবে বাংলাদেশে আনা হয়?

উ. ২৪ মে, ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দ। ১৯৭২ সালের এইদিনে 'জাতীয় কবি' ঘোষণা করা হয়।

প্র. নজরুলকে কবে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়?

উ. ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে; মৃত্যুর ছয়মাস পূর্বে।

প্র. কাজী নজরুলের বিদ্রোহের নানা প্রান্ত উন্মোচন করুন। ২৭তম বিসিএস লিখিত

উ. বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের আগমন ঘটে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে। যেখানে প্রতিটি স্তরে নিপীড়িত জনগণের দীর্ঘশ্বাস দেশের বাতাসকে বিষাক্ত করেছে; জাতীয় জীবনে ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজিত। তিনি লেখনি ধারণ করলেন, যাতে প্রবল প্রতিবাদের সুর ধ্বনিত হয়। 'অগ্নিবীণা', 'সর্বহারা', 'প্রলয়শিখা', 'ফণীমনসা' ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে নজরুলের স্বাদেশিকতা ও শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছে। তিনি বিধাতার স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হয়েছেন। এজন্য তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়।

প্র. 'নজরুল ও ঢাকা' এ সম্পর্কে কি জান?

উ. কাজী নজরুল ইসলাম অবিভক্ত বাংলার স্বদেশি নেতা হেমন্তকুমার সরকারের সাথে ১৯২৬ সালের জুন মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম ঢাকায় আসেন। তিনি প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত মুসলিম সাহিত্য সমাজের চতুর্থ বৈঠকে অংশগ্রহণ করার জন্য। ১৯৪০ সালের ১২ ডিসেম্বর কাজী নজরুল ইসলাম সর্বশেষ সুস্থ থাকা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। ঢাকায় নজরুলের প্রথম লেখা কবিতা 'অভিযান', যা 'সিন্ধু-হিন্দোল' কাব্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। তিনি মোট ঢাকা আসেন ১৩ বার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন মোট ৫ বার।  

প্র. নজরুল কী কী পদক পান?

উ. 'জগত্তারিণী স্বর্ণপদক'- ১৯৪৫ (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়), 'পদ্মভূষণ'- ১৯৬০ (ভারত সরকার), 'ডি.লিট'- ১৯৬৯ (রবীন্দ্রভারতী), 'ডি.লিট'- ১৯৭৪ (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), 'একুশে পদক'- ১৯৭৬ (বাংলাদেশ সরকার)।

Reference: অগ্রদূত বাংলা