গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

প্র. সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ প্রকাশিত প্রথম গল্পের নাম কী?

উ. 'হঠাৎ আলোর ঝলকানি'। এটি ঢাকা কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

প্র. তাঁর উপন্যাসসমূহ কী কী? ২১/১০তম বিসিএস

উ. 'লালসালু' (১৯৪৮): এতে গ্রাম-বাংলায় ধর্ম নিয়ে একটি শ্রেণির ব্যক্তিস্বার্থ অর্জন ও নারী জাগরণের চিত্র ফুটে উঠেছে। এ উপন্যাসটি তাঁর স্ত্রী অ্যান মারি ফরাসি ভাষায় 'L Arbre Sams Maeme (১৯৬১) নামে অনুবাদ করেন। এটি Tree without roots (১৯৬৭) নামে অনূদিত হয়। চরিত্র। মজিদ, জমিলা, আমেনা।

'চাঁদের অমাবস্যা' (১৯৬৪): আরেফ আলী নামের এক স্কুল মাস্টারকে অবলম্বন করে মানুষের চেতনাগত জটিলতা উল্লেখ প্রসঙ্গে সামন্ত-সমাজ প্রভাবিত গ্রামীণ জীবনের নানা অসঙ্গতি এ উপন্যাসের মূল বিষয়। এটি মনঃসমীক্ষণমূলক অস্তিত্ববাদী উপন্যাস। এক জ্যোস্না রাতে আরেফ আলী ঘর থেকে বের হয়ে দেখে বাঁশঝাড়ের ভেতর এক ন্যাংটা যুবতির লাশ পড়ে আছে। পাশে দণ্ডায়মান কাদের মিয়া (আরেফ আলী যে বাড়িতে আশ্রিত সেই বাড়ির মালিক)। কাদেরের সহযোগী হয়ে সে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। কিন্তু এ সত্য কথাটি সে বলতে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগে। একদিকে আশ্রয় হারানোর ভয়, অন্যদিকে সত্য গোপনের যন্ত্রণা। অবশেষে নিজের অস্তিত্বকে বিলীন করে দাদা সাহেব ও আইন কর্তৃপক্ষের নিকট সব সত্য বলে দিয়ে নিজে অস্তিত্ববান হয়ে উঠে। চরিত্র। আরেফ আলী, কাদের (দরবেশ), আলফাজ উদ্দিন (দাদা সাহেব)। (২০/১৫তম বিসিএস লিখিত)

The Ugly Asian: এটি ইংরেজিতে রচিত। এটি শিবব্রত বর্মণ 'কদর্য এশীয়' (২০০৬) নামে অনুবাদ করেন।

'কাঁদো নদী কাঁদো' (১৯৬৮): ধর্মের নামে আচার-সর্বস্বতা, বিজ্ঞানের নামে অদৃষ্টবাদিতা, বাস্তবতার নামে স্বপ্ন-কল্পনা ইত্যাদির বিরুদ্ধাচরণ, ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনের সুখ-দুঃখ ইত্যাদির সার্থক রূপায়ণ এ উপন্যাস। এ মনঃসমীক্ষণমূলক উপন্যাসে ফুটে উঠেছে একদিকে মুহাম্মদ মুস্তফার করুণ জীবনালেখ্য, অন্যদিকে শুকিয়ে যাওয়া বাকাল নদীর তীরবর্তী মানুষের জীবনচিত্র। এটি চেতনাপ্রবাহ রীতিতে লেখা। বাংলা সাহিত্যে ওয়ালীউল্লাহ প্রথম চেতনাপ্রবাহ রীতির প্রয়োগ ঘটান।

How to cook beans: এটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস। এটি শিবব্রত বর্মণ 'শিম কিভাবে রান্না করতে হয়' নামে অনুবাদ করেন।

প্র. 'লালসালু' উপন্যাসের পরিচয় দাও।

উ. গ্রাম-বাংলায় ধর্ম নিয়ে একটি শ্রেণির ব্যক্তিস্বার্থ অর্জন ও নারী জাগরণের চিত্র নিয়ে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ রচনা করেন 'লালসালু' (১৯৪৮)। নোয়াখালী অঞ্চল থেকে মজিদ নামের একটি কূটচরিত্র গারোপাহাড়ি অঞ্চলে গিয়ে সেই এলাকার মানুষকে ধর্মের নামে কিভাবে শোষণ করে, সেই বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে। সে এক গ্রামের ভাঙা কবরকে প্রখ্যাত মোদাচ্ছের পীরের কবর বলে সেখানে মাজার প্রতিষ্ঠা করে। ধর্ম ব্যবসায়ী মজিদ অর্থ ও প্রভাব বৃদ্ধির সাথে সাথে অল্পবয়সী জমিলাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করে। সহজ-সরল জমিলার মধ্যে রয়েছে এক ধরনের চঞ্চলতা। মাজারের প্রতি তার কোনো ভক্তি বা শ্রদ্ধা নেই। এতে বিচলিত হয়ে উঠে মজিদ। তাই জমিলাকে শাস্তি দেয়ার জন্য মাজার ঘরে বেঁধে রাখে। মজিদ গ্রামের মোড়লদেরও নিয়ন্ত্রণ করে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তবে শেষে স্বল্পবয়সী স্ত্রী জমিলা কর্তৃক সে লাঞ্ছিত হয়, মাজারের গায়ে পা লেগে থাকে জমিলার।

প্র. তাঁর নাটকসমূহ কী কী?

উ. 'বহিপীর' (১৯৬০, সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান): এ নাটকে ধর্মকে কিভাবে ভণ্ড বহিপীর নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগিয়েছে তাই ফুটে উঠেছে। চরিত্র: বহিপীর, তাহেরা, হাতেম, হাসেম।

"তরঙ্গভঙ্গ' (১৯৬৪, সূত্র: বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান)। অস্তিত্বের সংকটে নিপতিত মানুষের অন্তর্গত আর্তনাদ শব্দরূপ পেয়েছে এ নাটকে। চরিত্র: আমেনা, মতলুব আলী।

'সুড়ঙ্গ' (১৯৬৪)। এ নাটকে মানুষের চেতনার গভীরস্থ লোভ, লালসা, ঘৃণা, ঈর্ষাকে রূপকাশ্রয়ে তুলে ধরেছেন।

'উজানে মৃত্যু' (১৯৬৬)। আধুনিক সভ্যতার অন্তঃসারশূন্যতা, এর ক্লান্তিকর পথপরিক্রমা, নিরাশাবাদী ভাব কিন্তু সুখের জন্য অসীম প্রতীক্ষা, যা শেষ হবার নয়, এগুলোই এ নাটকের বিষয়বস্তু। এটি একটি অ্যাবসার্ড নাটক।

প্র. তাঁর গল্পগ্রন্থসমূহ কী কী?

উ. 'নয়নচারা' (১৯৫১)। এটি তার প্রথম গল্পগ্রন্থ, যা ছাত্রাবস্থায় প্রকাশিত হয়।

'দুই তীর ও অন্যান্য গল্প' (১৯৫৫)।

'অজানা আতঙ্ক' (১৯৬২)।

'মাটির পুতুল' (১৯৬৪)।

Reference: অগ্রদূত বাংলা