উপসর্গ

ইংরেজি 'Prefix' শব্দকে বাংলায় 'উপসর্গ' বলে। বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছে, যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না, এগুলো অন্য শব্দের পূর্বে বসে। যেসব অব্যয় ধাতু বা শব্দের পূর্বে বসে নতুন নতুন শব্দের সৃষ্টি করে, তাদের উপসর্গ বলে। যেসব শব্দাংশ শব্দমূলের পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলোকে উপসর্গ বলে। যেসব অর্থহীন শব্দাংশ অন্য শব্দের শুরুতে বসে নতুন শব্দ গঠন করে, সেগুলোকে উপসর্গ বলে। অজানা (অজানা), অভিযোগ (অতি+যোগ), বেতার (বে+তার) প্রভৃতি শব্দের 'অ', 'অভি' ও 'বে' হলো উপসর্গ।

উপসর্গগুলোর নিজস্ব কোনো অর্থবাচকতা নেই, কিন্তু অন্য শব্দের পূর্বে বসে এদের অর্থদ্যোতকতা বা নতুন শব্দ সৃজনের ক্ষমতা থাকে। যেমন: পরি (উপসর্গ) + চালক = পরিচালক; অজানা অজানা; অভিযোগ অভিযোগ। বে+তার= বেতার: সম্+প্র+দান সম্প্রদান; বি+নির+মান = বিনির্মাণ। উপসর্গের মাধ্যমে-

  • নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি হয়। যেমন: প্র+ছায়া = প্রচ্ছায়া: সম্+বাদ = সংবাদ: বি+বাদ = বিবাদ।
  • শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত হয় (পরি+পুষ্টি = পরিপুষ্টি)।
  • শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটে। যেমন: প্র+তাপ = প্রতাপ: সম্+পূর্ণ = সম্পূর্ণ।
  • শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটে। যেমন: নিম+রাজি = নিমরাজি: সুনজর = সুনজর।
  • শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটে (উপ+কথা = উপকথা)।
  • শব্দের বিপরীত অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: গরহাজির = গরহাজির।

উপসর্গ - মূল শব্দ - উপসর্গযোগে গঠিত শব্দ

  • প্র - হার - প্রহার (মারা) 
  • উপ - হার - উপহার (উপটৌকন) 
  • আ - হার - আহার (খাওয়া) 
  • বি - হার - বিহার (ভ্রমণ) 
  • সম - হার - সংহার (হত্যা) 
  • উৎ - হার - উদ্ধার (রক্ষা করা) 
  • পরি - হার - পরিহার (পরিত্যাগ)

ভাষায় ব্যবহৃত এসব অব্যয়সূচক শব্দাংশেরই নাম উপসর্গ। 

যেমন: 'কাজ' একটি শব্দ। এর আগে 'অ' অব্যয়টি যুক্ত হলে হয় 'অকাজ', যার অর্থ নিন্দনীয় কাজ। এখানে অর্থের সংকোচন হয়েছে। 'পূর্ণ' (ভরা) শব্দের পূর্বে 'পরি' যোগ করায় 'পরিপূর্ণ' হলো। এটি পূর্ণ শব্দের সম্প্রসারিত রূপ (অর্থে ও আকৃতিতে)।

Reference: অগ্রদূত বাংলা