Description:
ক্ষুদ্র নৃ - গোষ্ঠীগুলোর জনসংখ্যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২ শতাংশ। বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দেশের পূর্বাঞ্চলে বসবাস করে। বর্তমানে বাংলাদেশে বসবাসকারী মোট ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা ৫০টি।
জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী চাকমা। চাকমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং তাদের প্রধান ধর্মীয়গ্রন্থ ত্রিপিটক। বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর মধ্য চাকমাদের শিক্ষার হার সব থেকে বেশি। আরও তথ্য –
সংখ্যাগত বিচারে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। মারমারা ‘মগ’ নামেও পরিচিত। তাদের আদি নিবাস আরাকান এবং তারা জাতিতে মঙ্গলীয়। তিন পার্বত্য জেলায় মারমাদের আবাস থাকলেও তাদের মূল জনগোষ্ঠী বান্দরবন জেলায় বসবাস করে। আরও তথ্য –
সংখ্যাগত বিচারে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী। তারা অস্ট্রিক ভাষাভাষী আদি - অস্ট্রেলীয় (প্রোটো - অস্ট্রালয়েড) জনগোষ্ঠীর বংশধর। সাঁওতাল সমাজের মূলভিত্তি হচ্ছে গ্রাম পঞ্চায়েত। সোহরাই উৎসব সাঁওতালদের একটি বড় উৎসব যা পৌষ সংক্রান্তির দিন অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদ্যাপিত হয়। ১৮৫৫ সালে সাওতাল বিদ্রোহ সংগঠিত হয়। বিদ্রোহের নায়ক দুই ভাই কানু আর সাদু। এছাড়া তেভাগা আন্দোলনে সাঁওতালদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছিল।
গারোরা মূলত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড় ও বাংলাদেশের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলায় বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠী। গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। এ সমাজে মা পরিবারের প্রধান ও সম্পত্তির মালিক। প্রথা অনুযায়ী এ সমাজে পারিবারিক সম্পত্তির মালিক মেয়েরা। তবে শুধুমাত্র নির্বাচিত মেয়েই সম্পত্তির মালিকানা অর্জন করে। এই নির্বাচিত মেয়েকে গারো ভাষায় ‘নক্না’ বলা হয়। সাধারণত পরিবারের কনিষ্ঠ কন্যা সন্তানকেই ‘নক্না’ নির্বাচন করা হয়। গারোরা নিজেদের আচিক্ মান্দে বা পাহাড়ের মানুষ বলে পরিচয় দেয়। তাদের ভাষার নামও আচিক ভাষা। তাদের আদি ধর্মের নাম ‘সংসারেক’। তবে বর্তমানে অধিকাংশ গারো খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী।
বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের আসামে এ জনগোষ্ঠী বসবাস করে। তাদেরকে ‘খাসি’ বলেও আখ্যায়িত করা হয়। এরা মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভূত। খাসিয়া সমাজ মাতৃতান্ত্রিক। খাসিয়া গ্রামগুলোকে পুঞ্জি বলে এবং গ্রাম প্রধানকে বলা হয় ‘সিয়েন’।
বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একটি জাতিগোষ্ঠী। এরা মূলত পটুয়াখালী জেলায় বসবাস করে। এদের আদি নিবাস আরাকান। এরা সমতলে বসবাসকারী মগের বংশধর। আর্য বংশোদ্ভূত প্রকৃতি উপাসক রাখাইনরা প্রাচীনযুগে মগধ রাজ্যে বসবাস করত। রাখাইনদের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির সুপ্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে। তাদের প্রচলিত নৃত্যের মধ্যে প্রদীপ নৃত্য, শিশু নৃত্য, পুষ্পনৃত্য, জলকেলি নৃত্য, ছাতা নৃত্য, পাখা নৃত্য, রাখাল নৃত্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তাদের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র আছে। আরও তথ্য –
লক্ষ্য রাখুন: গ্রাম ও গ্রাম প্রধান
চাকমাদের গ্রামের নাম ‘আদম’ ও গ্রামপ্রধানের নাম ‘কারবারি’, মারমাদের গ্রামের নাম ‘রোয়া’ ও গ্রামপ্রধানের নাম ‘রোয়াজা’ এবং খাসিয়াদের গ্রামের নাম ‘পুঞ্জি’ ও গ্রামপ্রধানের নাম ‘সিয়েন’
গোষ্ঠী | বাসস্থান |
---|---|
চাকমা | রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার |
মারমা | বান্দরবন, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি |
ম্রো/মুরং | বান্দরবন (চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে) |
ত্রিপুরা | খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী |
তঞ্চঙ্গ্যা | রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম |
লুসাই | খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি |
পাংখোয়া | বান্দরবন ও রাঙ্গামাটি |
খিয়াং | রাঙ্গামাটি, বান্দরবন, চট্টগ্রাম |
রাখাইন | পটুয়াখালী, বরগুনা ও কক্সবাজার |
****পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১১টি জাতিসত্তা বসবাস করে। তাদের মধ্যে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, মুরং, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া, লুসাই, খুমি অন্যতম।পার্বত্য তিন জেলাতেই বসবাস করে এমন উল্লেখযোগ্য জাতিগোষ্ঠী হল – চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা ও লুসাই। ত্রিপুরাদের (টিপরা) বাংলাদেশের সিলেট ও কুমিল্লা জেলাতেও বসবাস করতে দেখা যায়।
গোষ্ঠী | বাসস্থান |
---|---|
গারো | ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোণা, টাঙ্গাইল, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও গাজীপুর |
খাসিয়া/খাসি | সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেট (জৈয়ন্তিকা পাহাড়ে) |
মণিপুরি | মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও সিলেট। তাদের প্রধান আবাসস্থল মৌলভীবাজার। |
হাজং | ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা, শেরপুর ও সিলেট |
পাঙন | মৌলভীবাজার |
শবর | মৌলভীবাজার, সিলেট |
মুণ্ডা | সিলেট, যশোর ও খুলনা |
গোষ্ঠী | বাসস্থান |
---|---|
সাঁওতাল | দিনাজপুর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, বগুড়া, রংপুর। প্রধান আবাসস্থল দিনাজপুর। |
রাজবংশী | রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া ও ময়মনসিংহ। প্রধান আবাসস্থল রংপুর। |
ওরাওঁ | দিনাজপুর, রংপুর, রাজশাহী ও বগুড়া |
কোল | চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী |
প্রধান ধর্ম | গোষ্ঠী |
---|---|
বৌদ্ধ | চাকমা, মারমা, ম্রো/মুরং, রাখাইন |
খ্রিষ্টান | সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া/খাসি |
হিন্দু | সাঁওতাল, ত্রিপুরা |
সনাতন | মনিপুরি |
ইসলাম | পাঙন, লাউয়া |
প্রকৃতি উপাসক | ওরাওঁ |
গোষ্ঠী | ভাষা |
---|---|
চাকমা | চাকমা ভাষা। নিজস্ব বর্ণমালা আছে। |
মারমা | মারমা ভাষা। ভাষার নিজস্ব হরফ আছে। |
সাঁওতাল | সাঁওতালি। এটি অনক্ষর ভাষা যার নিজস্ব বর্ণমালা নেই । |
ত্রিপুরা | ককবরক। এ ভাষার নিজস্ব বর্ণমালা নেই। |
গারো | আচিক খুসিক/ মান্দি। এটি অনক্ষর ও অলিখিত একটি প্রাচীন অনাযর্ ভাষা। তবে বাংলা হরফে গারো ভাষা স্বাচ্ছন্দে লেখা যায়। |
মুরং | ম্রো। পূর্বে নিজস্ব বর্ণমালা না থাকলেও বর্তমানে নিজস্ব বর্ণমালা তৈরি হয়েছে। |
মণিপুরী | মৈ তৈ / মণিপুরী ভাষা। নিজস্ব বর্ণমালা আছে। |
রাখাইন | আরাকানী / রাখাইন ভাষা |
ওরাওঁ | কুরুখ / শাদরি। উত্তরবঙ্গের ওঁরাও সম্প্রদায় কুরুখ ভাষা ও সিরাজগঞ্জ থেকে রাজশাহী অঞ্চলের ওঁরাওরা সাদরি ভাষা ব্যবহার করে। নিজস্ব বর্ণমালা নেই। |
খাসিয়া | পাড়, লিংগাম ও ওয়ার। রোমান হরফে লেখা হয়। |
কোল | কোল/মান্দারী/ খেড়োয়াড়ী। বর্তমানে নিজস্ব বর্ণমালা আছে। |
গোষ্ঠী | উৎসব |
---|---|
চাকমা | বিজু, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘি পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা |
মারমা | সাংগ্রাই, ওয়াগ্যই, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, মাঘি পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা |
সাঁওতাল | সোহরাই উৎসব (পৌষ সংক্রান্তির দিন উদ্যাপিত হয়), বাহা ( বসন্তে ফুলফোটার উৎসব), স্যালসেই উৎসব বোঙ্গাবোঙ্গি উৎসব |
গারো | ওয়ানগালা (ফসল ঘরে তোলার উৎসব) |
ত্রিপুরা | বৈসুব |
বৈসাবি উৎসব: পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার প্রধান ৩টি আদিবাসী সমাজ: চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা – এর বর্ষবরণ উৎসব। এটি তাদের অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান। উৎসবটিকে ত্রিপুরা জনগষ্ঠী বলে বৈসুব, বৈসু বা বাইসু , মারমারা বলে সাংগ্রাই এবং চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের বলে বিজু। এই তিনটি উৎসবের প্রথম অক্ষর গুলো নিয়ে ‘বৈসাবি’ নামকরণ করা হয়েছে।